পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 বড়দের মধ্যে দ্বিবিদ পাহাড় ছুঁড়িয়া অনেক রাক্ষস মারিল। হনুমানও পর্বতের চূড়া আর গাছ লইয়া কুম্ভকর্ণের সহিত কম যুদ্ধ করে নাই। কিন্তু কুম্ভকর্ণের শূলের কাছে তাহার গাছ পাথর কিছুই করিতে পারিল না। তাহা দেখিয়া হনুমান রাগের ভরে একটা প্রকাণ্ড পর্বতের চূড়া দিয়া ঠুকিয়া তাহাকে অজ্ঞান করিয়া দিল। কুম্ভকর্ণও আবার একটু সুস্থ হইয়া, হনুমানের বুকে এমন এক শক্তির ঘা মারিল যে হনুমান বেদনায় চেঁচাইয়া অস্থির।

 ইহার পর ঋষভ, শরভ, নীল, গবাক্ষ আর গন্ধমাদন এই পাঁচজন মিলিয়া কুম্ভকর্ণকে মারিতে গেল। কিন্তু তাহারা কুম্ভকর্ণের কি করিবে! তাহারা প্রাণপণ করিয়া আঁচড়, কামড়, লাথি, কিল, গাছ, পাথর যত মারে কুম্ভকর্ণের তাহাতে বেশ আরামই বোধ হয়—যেন কেহ তাহার ঘামাচি মারিয়া দিতেছে। তারপর কুম্ভকর্ণ যখন তাহাদিগকে বগলে ফেলিয়া চাপিতে আর ঠুকিতে আরম্ভ করিল, তখন বেচারাদের দুর্দশার শেষ রহিল না।

 হাজার হাজার বানর কুম্ভকর্ণকে একসঙ্গে আক্রমণ করিয়াও তাহার কিছুই করিতে পারিল না। কুম্ভকর্ণ তাহাদিগকে ধরিয়া অমনি মুখে দেয়। অনেক বানর আবার তাহার মুখের ভিতর ঢুকিয়া নাকের ছিদ্র দিয়া বাহির হইয়াও আসে।

 তারপর অঙ্গদ অনেক যুদ্ধ করিল, কিন্তু তাহাতেও কোন ফল হইল না। একবার সে বুকে চড় মারিয়া কুম্ভকর্ণকে অজ্ঞান করিয়াছিল বটে, কিন্তু কুম্ভকর্ণও তখনই আবার লাফাইয়া উঠিয়া, এক কিলে অঙ্গদকে অজ্ঞান করিয়া দিল।

 অঙ্গদকে অজ্ঞান দেখিয়া সুগ্রীব পাহাড় হাতে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে পাহাড় যে কুম্ভকর্ণের গায়ে লাগিয়া গুঁড়া হইয়া গেল, তাহা বোধহয় বলিবার আগেই বুঝিয়াছ। তারপর শূল দিয়া সে সুগ্রীবকে এমনি এক ঘা মারিবার যোগাড় করিয়াছিল যে হনুমান তাড়াতাড়ি শূলটা ভাঙিয়া না ফেলিলে, হয়ত তখনই সুগ্রীবের বুক ফুটা হইয়া যাইত। শূল ভাঙার পরেও কুম্ভকর্ণ সুগ্রীবকে সহজে ছড়িল না। সে তাহাকে পর্বতের চূড়ার ঘায় অজ্ঞান করিয়া, রাক্ষসদিগকে দেখাইবার জন্য লঙ্কার ভিতর লইয়া গেল।

 লঙ্কার ভিতরে গিয়াই সুগ্রীবের জ্ঞান হইয়াছে। তখন সে মনে করিল যে এইবেলা কুম্ভকর্ণকে জব্দ করিবার একটা উপায় করা চাই। যেই এই কথা মনে করা, আর অমনি দুই হাতে রাক্ষসের দুটি কান, দাঁতে তাহার নাকটি, আর দুই পায়ে তাহার দুই পাশের চামড়া একেবারে শিকড়সুদ্ধ ছিঁড়িয়া তোলা। সে সময়ে কুম্ভকর্ণ কিরূপ চমকিয়া গিয়াছিল আর কেমন মুখ সিটকাইয়াছিল আর কি ভয়ানক চ্যাঁচাইয়াছিল আর সুগ্রীবকেই বা কতখানি ব্যস্ত হইয়া তাড়াতাড়ি আছড়াইয়া ফেলিয়াছিল, তাহা আর বলিবার দরকার নাই। আর সেই গোলমালে যে সুগ্রীবও দুই লাফে সেখান হইতে চলিয়া আসিল, তাহাও সহজেই বুঝিতে পার।

 কুম্ভকর্ণের চেহারা একেই ত অতিশয় ভয়ানক, তাহার উপরে আবার এখন নাক কান নাই; সুতরাং তাহা আরও ভয়ানক হইবারই কথা। আবার বেদনায় সে এতই রাগিয়া গিয়াছে যে এখন আর রাক্ষস বানর বুঝিতে পারে না। রাক্ষসকেও ধরিয়া মুখে দেয়, বানরকেও ধরিয়া মুখে দেয়। কাজেই এবারে যে বানরেরা তাহাকে দেখিয়া আরও ভয় পাইল, ইহা আশ্চর্য নহে। তাহা দেখিয়া লক্ষ্মণ তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন।

 তখন কুম্ভকর্ণ লক্ষ্মণকে বলিল, “লক্ষ্মণ, তুমি ছেলেমানুষ, তুমি যে সাহস করিয়া আমার সহিত যুদ্ধ করিতে আসিয়াছ, তাহাতেই আমি সন্তুষ্ট হইয়াছি। কিন্তু আমি এখন রামকে