পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

“আর কাজ নাই, তাহা হইলে ভয় পাইবে৷”

 ভীম বলিলেন, “সত্যি দাদা, আমি আর তাকাইতে পারিতেছি না। এখন ওটাকে গুটাইয়া লউন৷”

 তখন হনুমান তাঁহার শরীর ছোট করিয়া ভীমের সহিত কোলাকুলি করিলেন, তারপর বলিলেন, “ভাই ঘরে যাও। দরকার হইলে আমাকে ডাকিও, আমি উপস্থিত হইব। যুদ্ধের সময় তুমি সিংহনাদ করিলে আমি তাহা বাড়াইয়া দিব, আর অর্জুনের রথের চূড়ায় বসিয়া এমন চিৎকার করিব যে, তাহাতেই শত্রু আধমরা হইয়া যাইবে৷”

 হনুমান ভীমকে এই কথা বলিয়া, আর তাঁহাকে পদ্মফুলের সন্ধান বলিয়া দিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন৷

 কৈলাস পর্বতের উপরে কুবেরের সরোবরে এই ফুল ফোটে। ফুলগুলি সোনার, তাহার বোঁটা বৈদূর্যমণির, আর তাহার গন্ধের কথা তো পূর্বেই বলিয়াছি। কুবেরের শত শত রাক্ষস প্রত্নী সরোবরে পাহারা দেয়। ইহারা ভীমকে নিষেধ করিয়া বলিল, “হারে ই কিমন লোক বটেক? কুবের্‌র্ মহারাজ্জকু বলিলেক্ নি, পুচ্ছিলেক্ নি, আউ ফুল লেবেকে চলিলেক্৷’

 ভীম বলিলেন, “কোথায় তোদের কুবের মহারাজ, যে তাহার নিকট জিজ্ঞাসা করিব? আমার নাম ভীম, পাণ্ডুর পুত্র। আমরা ক্ষত্রিয় কাহাকেও জিজ্ঞাসা করিয়া কাজ করি না। পাহাড়ের উপরে ফুল ফুটিয়াছে তাহা তোদের কুবেরের যেমন, আমারও তেমনি, জিজ্ঞাসা আবার কাহাকে করিব?”

 এই বলিয়া ভীম জলে নামিলেন। আর রাক্ষসেরাও অমনি “ধর! মার! কাট! বাঁধ! খা!” বলিতে বলিতে তোমর পট্টিশ হাতে দাঁত কড়মড়াইয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিল। কিন্তু ভীমের গদা যে কেমন জিনিস তাহা তাহারা জানিত না! সেই গদা ঘুরাইয়া ভীম যখন নিমেষের মধ্যে একশোটা রাক্ষসের মাথা ফাটাইয়া ফেলিলেন, তখন আরগুলি অস্ত্র-শস্ত্র ফেলিয়া চ্যাঁচাইতে চ্যাঁচাইতে উধর্বশ্বাসে কুবেরের কাছে গিয়া উপস্থিত হইল। কুবের তাহাদের নিকট সকল কথা শুনিয়া বলিলেন, “আমি জানি, ভীম দ্রৌপদীর জন্য ফুল নিতে আসিয়াছে। উহার যত ইচ্ছা ফুল লইয়া যাইতে দাও৷”

 সুতরাং রাক্ষসেরা আর ভীমকে বাধা দিল না, তিনি সাধ মিটাইয়া ফুল লইলেন৷

 এদিকে পাণ্ডবেরা ভীমের বিলম্ব দেখিয়া তাহাকে খুঁজিতে খুঁজিতে ঘটোৎকচের সাহায্যে সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। কুবেরের কথায় কিছুদিন তাঁহাদিগকে সেই স্থানে থাকিতে হইল। তারপর সেখান হইতে বিদায় লইয়া আবার বদরিকাশ্রমে আসিয়া তাহারা অর্জুনের অপেক্ষা করিতে লাগিলেন৷

 এই সময়ে ভীম আর-একটা রাক্ষস মারেন। এটার নাম জটাসুর। হতভাগা এমনি চমৎকার ব্রাহ্মণ সাজিয়া আসিয়াছিল যে, পাণ্ডবেরা তাহাকে রাক্ষস বলিয়া চিনিতেই পারেন নাই। তাঁহারা তাহাকে ব্রাহ্মণ মনে করিয়া আদরের সহিত সঙ্গে রাখিয়াছেন, আর ইহার মধ্যে দুষ্ট কোন্ সুযোগে একদিন যুধিষ্ঠির, নকুল, সহদেব আর দ্রৌপদীকে লইয়া ছুট দিয়াছে। তাহার সাজাটাও ভীমের হাতে সে তেমনি করিয়া পাইল!

 তারপর ক্রমে অর্জুনের ফিরিবার সময় কাছে আসিলে, পাণ্ডবেরা আবার গন্ধমাদন পর্বতে যান। ইহার কিছুদিন পরেই ইন্দ্রের রথে চড়িয়া অৰ্জুন স্বর্গ হইতে তাঁহাদের নিকটে