যুদ্ধের সংবাদে সকলেই খুব খুশি হইল। আর উত্তরা সেই কাপড়গুলি পাইয়া যে কত খুশি হইল। তাহা আর লিখিয়া কি বুঝাইব?
এইরূপে অজ্ঞাতবাস শেষ হইল। পাঁচ ভাই উত্তরকে লইয়া পরামর্শ করিলেন যে, আর দুদিন পরে তাঁহারা নিজের পরিচয় দিবেন। কিরূপ করিয়া পরিচয় দেওয়া হইবে, তাহাও স্থির হইল।
যেদিন পরিচয় দিবার কথা, সেদিন পাণ্ডবেরা স্নানের পর সুন্দর সাদা পোশাক আর অলঙ্কার পরিয়া, বিরাটের সিংহাসনে গিয়া বসিলেন। বিরাট সভায় আসিয়া দেখেন, একি আশ্চর্য ব্যাপার। সভাসদ কঙ্ক সাজগোজ করিয়া তাঁহার সিংহাসনে বসিয়া আছেন। তিনি বিরক্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কি কঙ্ক! আমার সিংহাসনে কেন বসিতে গেলে?”
এ কথায় অর্জুন হাসিয়া বলিলেন, “মহারাজ যুধিষ্ঠির ইন্দ্রের সিংহাসনে বসিতে পারেন। আপনার সিংহাসনে বসাতে তাঁহার অন্যায় কি হইল?”
বিরাট বলিলেন, ইনিই যদি রাজা যুধিষ্ঠির হন তবে তাঁহার ভ্রাতাগণ আর দ্রৌপদী দেবী কোথায়?
এ প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন একে একে সকলেরই পরিচয় দিলেন। তারপর উত্তর অর্জুনের অনেক প্রশংসা করিয়া বলিলেন, “যে দেবপুত্র কৌরবদিগের সহিত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করিয়া গরু ছাড়াইয়াছিলেন, তিনি এই অর্জুন।
সকল কথা শুনিয়া বিরাটের যেমন আশ্চর্য বোধ হইল, তেমনি তিনি আনন্দিতও হইলেন। পাণ্ডবদিগকে যতপ্রকারে আদর দেখানো সম্ভব মনে হইল, তিনি তাহার কিছুই বাকি রাখিলেন না। তিনি কেবলই বলিতে লাগিলেন, আমার কি সৌভাগ্য! বিশেষত, অর্জুনের প্রতি তাঁহার যে কিরূপ স্নেহ হইল, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। তাঁহার নিতান্ত ইচ্ছা হইল, নিজের কন্যা উত্তরার সহিত তাঁহার বিবাহ দেন।
কিন্তু এ কথায় অর্জুন রাজি হইলেন না। তিনি বলিলেন, আমি উত্তরার গুরু, তাহাকে সর্বদা আমার কন্যার মতো ভাবিয়া স্নেহ করিয়াছি। ইনিও আমাকে পিতার ন্যায় ভক্তি করিয়াছেন। তাঁহার সহিত কি আমার বিবাহের কথা হইতে পারে? আমার পুত্র অভিমন্যুর সহিত উত্তরার বিবাহ হউক।’
এই প্রস্তাবে সকলেই সন্তুষ্ট হইলেন। রূপে, গুণে, বিদ্যায় বুদ্ধিতে, বীরত্বে অভিমন্যুর মতো এমন সুপাত্র আর হয় না। কাজেই, সুন্দর দিন দেখিয়া, মহাসমারোহে অভিমন্যু আর উত্তরার বিবাহ হইয়া গেল। বিবাহে নানা দেশ হইতে বিরাট এবং পাণ্ডবদিগের আত্মীয়-স্বজন আর রাজারা আসিয়াছিলেন। কৃষ্ণ, বলরাম, দ্রুপদ, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি কেহই আসিতে বাকি ছিল না।