ভীষণ অগ্নিও তৎক্ষণাৎ আসিয়া, রথযুদ্ধ তাঁহাকে ঘিরিয়া ফেলিল। তখন কৃষ্ণ আর অর্জুন উধৰ্বশ্বাসে ছুটিযা গিয়া, তাঁহাকে রথ হইতে টানিয়া নামান, আর তাঁহার অস্ত্র কড়িয়া ফেলিয়া দেন, নচেৎ না জানি সেদিন কি হইত!
এইরূপে ভীম বঁচিয়া গেলেন বটে, কিন্তু জোর করিয়া নামাইবার আর অস্ত্র কাড়িয়া লইবার দরুন, তাঁহার ভয়ানক রাগ হওয়াতে, তিনি সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করিয়া নিশ্বাস ফেলিতে লাগিলেন।
নারায়ণ অস্ত্র বৃথা হওয়ায়, অশ্বত্থামা ক্রোধভরে অতি ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ করিলে ধৃষ্টদ্যুম্ন, সাত্যকি, ভীম ইঁহাদের কেহই তাঁহার সম্মুখে টিকিয়া থাকিতে পারলেন না। তারপর অর্জুন তাহকে আক্রমণ করিলে, তিনি মন্ত্র পড়িয়া আগ্নেয়াস্ত্র নামক এক মহা অস্ত্র তাহার প্রতি নিক্ষেপ করা মাত্র অতি ভীষণ কাণ্ড উপস্থিত হইল, যেন সৃষ্টি থাকে কি যায়। এরূপ অস্ত্র আর কেহ কখনো দেখে নাই। অশ্বথামা মনে করিয়াছিলেন যে, এ অস্ত্রে পাণ্ডবেরা নিশ্চয় মরিবে। কিন্তু অর্জুন তাহার পরক্ষণেই ব্রহ্মাস্ত্র মারিয়া সে অস্ত্রকে দূর করিয়া দিলেন। তখন অশ্বথামা নিতান্ত নিরাশভাবে “দূর হোক। সব মিথ্যা!” এই বলিতে বলিতে রণস্থল ছাড়িয়া প্রস্থান করিলেন।
কর্ণপৰ্ব
চদিন ঘোরতর যুদ্ধের পর দ্রোণ প্রাণত্যাগ করিলেন। ইহার পর কাহাকে সেনাপতি করা যায়, এ বিষয়ে পরামর্শ আরম্ভ হইলে, অশ্বথামা বলিলেন, “মহাবীর কর্ণও অসাধারণ যোদ্ধা, অতএব তাঁহাকেই আমরা সেনাপতি করিয়া, শত্রুদিগকে বিনাশ করিব৷”
তখন দুর্যোধন বলিলেন, “হে কর্ণ! তোমার মতো যোদ্ধা তো আর কেহই নহে, সুতরাং তুমিই এখন আমাদের সেনাপতি হও৷”
এ কথায় কর্ণ বলিলেন, “মহারাজ! আমি পূর্বেই বলিয়াছি যে, পাণ্ডবদিগকে পরাজয় করিব। এখন আমি তোমার সেনাপতি হইতেছি, সুতরাং মনে কর যেন পাণ্ডবেরা হারিয়া গিয়াছে৷”
তখনই ধূমধামের সহিত কর্ণকে সেনাপতি করা হইল। তারপর রাত্রি প্রভাত হইবামাত্র দেখা গেল যে, ‘সাজ! সাজ!’ বলিয়া সকলে যুদ্ধের জন্য ব্যস্ত। কর্ণকে সেনাপতি করিয়া, আবার কৌরবদিগের সাহস ফিরিয়া আসিয়াছে। তাহদের এই বিশ্বাস হইয়াছে যে, ভীষ্ম আর দ্রোণ স্নেহ করিয়া পাণ্ডবদিগকে ছাড়িয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু এবার কর্ণের হাতে আর