পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩১১

রথ কাটিয়া গেল। তাহার সঙ্গের একটি রক্ষকও বাঁচিয়া নাই; অপর কৌরবেরা, অর্জুনের ভয়ে, তাহাকে ফেলিয়া পলায়ন করিতেছে। কৌরবদের মধ্যে কেবল কর্ণই ভয় পান নাই; তিনি অর্জুনের সামনেই বাণবৃষ্টি করিতেছেন।

 এমন সময় কোথা হইতে ঐ সাপটা আসিয়া কর্ণের তৃণের ভিতরে ঢুকিল; এ সেই অশ্বসেন, খাণ্ডব দাহের সময় সে অনেক কষ্টে পাতালে ঢুকিয়া প্রাণ বাঁচাইয়াছিল। সেই রাগে, সে আজ কর্ণের বাণের ভিতরে ঢুকিয়া অর্জুনকে বধ করিতে আসিয়াছে, কর্ণ ইহার কিছুই জানেন না। অশ্বসেন যে বাণের ভিতরে ঢুকিয়াছে, তাহারো চেহারা সাপের মতো। কর্ণ অর্জুনকে মারিবার জন্য এই বাণ বহুকাল যাবৎ পরম যত্নে চন্দন চূর্ণের ভিতরে রাখিয়াছে।

 এখন অর্জুনকে কিছুতেই আঁটিতে না পারিয়া, কর্ণ সেই দারুণ বাণ ধনুকে জুড়িয়া বসিয়াছে। তাহার সঙ্গে সঙ্গেই উল্কাবৃষ্টি আরম্ভ হইয়াছে, আকাশে আগুন ধরিয়া গিয়াছে। এ বাণ লাগিলে আর অর্জুনের রক্ষা নাই। ইহাকে আটকাইবার ক্ষমতাও কিছুই নাই। তাই বাণ ছুঁড়িবার সময় কর্ণ বলিলেন, “অর্জুন! এইবারে তুমি গেলে!” উঃ! কি ভয়ংকর বাণ! সর্বনাশ হয় বুঝি।

 এমন সময় কৃষ্ণ হঠাৎ পায়ে চাপিয়া অর্জুনের রথখানিকে মাটির ভিতরে বসাইয়া দিলেন; ঘোড়াগুলি হাঁটু গাড়িয়া রহিল। আর কর্ণের বাণ অর্জুনের গায়ে পড়িতে পাইল না, তাহার সেই ইন্দ্রদত্ত আশ্চর্য মুকুটখানি গুড়া করিয়া দিল, অর্জুন বাঁচিয়া গিয়া সাদা পাগড়ি বাধিয়া লইলেন।

 সাপের বাছা ঠকিয়া গিয়া বড়ই চটিল। সে কর্ণকে গিয়া বলিল, “কর্ণ, তুমি আমাকে না দেখিয়াই বাণ মারিয়াছিলে, তাই অর্জুনের মাথা কাটিতে পারি নাই এবারে আমাকে দেখিয়া বাণ মার, নিশ্চয় উহাকে বধ করিব।”

 কিন্তু কর্ণ বড় অহংকারী লোক, তিনি অন্যের সাহায্য নিতে প্রস্তুত নহে। কাজেই দুষ্ট সাপ নিরাশ মনে ফিরিয়া চলিল। কৃষ্ণকে ফাঁকি দিয়া সে কোথায় যাইবে? তিনি অমনি অর্জুনকে তাহার কথা বলিয়া দিলেন, আর দেখিতে দেখিতে দুষ্ট সাপ খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল। ততক্ষণে কৃষ্ণও রথখানিকে তুলিয়া লইয়াছে, আর কি ভয়ানক যুদ্ধই চলিয়াছে! কৃষ্ণকে বারোটি আর অজুনকে নব্বুইটি বাণ মারিয়া, কর্ণের আনন্দের সীমা নাই। অর্জুন তাহা সহিবেন কেন? তিনি কর্ণকে তেমনি শিক্ষা দিলেন। ঐ কর্ণের মুকুট আর কুণ্ডল উড়িয়া গেল! ঐ তাহার বর্ম ছিন্নভিন্ন হইল! আহা! এখন না জানি ঐ দারুণ বাণগুলি তাহার গায়ে কিরূপ বিঁধিতেছে। রক্তে শরীর ভাসিয়া গেল। ঐ তাহার বুকে ভীষণ বাণ ফুটিল, আর তাহার জ্ঞান নাই। তখন আর অর্জুনের উদার হৃদয় তাহাকে বাণ মারিতে চাহিল না; সেজন্য কৃষ্ণ তাহাঁকে তিরস্কার করিলেন।

 কর্ণের জ্ঞান হইল, আবার যুদ্ধ চলিল। কিন্তু এবারে বুঝি আর তাহার রক্ষা নাই। ঐ তাহার রথের চাকা বসিয়া গেল! আহা! এই বিপদের সময় আবার বেচারা তাঁহার সেই পরশুরামের দেওয়া বড়-বড় অস্ত্রের কথা সব ভুলিয়া গিয়াছে।

 নিজেরই পাপের ফল! পরশুরামকে ফাঁকি দিয়া তিনি তাহার নিকট অস্ত্র শিখিতে গেলেন; বলিলেন, “আমি ব্রাহ্মণ।” পরশুরাম যথার্থই ব্রাহ্মণ বোধে তাহাকে অশেষরূপ অস্ত্রশস্ত্র