বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তখনি এসে আবার জোড়া লেগে গেল! যা হোক আগুনের দেবতা সেই দানবের থেকে বড় জাদুকর ছিলেন; তিনি জানতেন যে কাটা জায়গায় লোহা আর পাথর ফেলে দিলে আর তা জোড়া লাগতে পারে না। কাজেই তিনি তাড়াতাড়ি দানবের আব একটা পা কেটেই লোহা আর পাথর দিয়ে কাটা জায়গা চাপা দিয়ে ফেললেন। তখন আব দনবের জাদু খাটল না, দেখতে দেখতে তার প্রাণ বেরিয়ে গেল।

 তখন ত চাষার খুব আনন্দ হল। সে আগুনের দেবতাকে কত প্রণাম যে করল তা গুণে শেষ করা যায় না। তারপর থেকে সে সকলকে বলত যে, এই দেবতাটির মত দেবতা নেই।

গল্প নয় সত্য ঘটনা

 জন্তুওয়ালা অনেক জন্তু লইয়া শহরের একটি ঘর ভাড়া করিয়াছে, মনে করিয়াছে, আজ হাটের দিন বিস্তর লোক হাটে আসিবে, আর তামাশা দেখিয়া পয়সা দিবে হাটে লোক কম নাই, কিন্তু জন্তুওয়ালার ঘরের আধখানাও ভরিল না। জন্তুগুলারও যেন ফুর্তি নাই। লোক কম দেখিয়া তাহারাও কেমন হাল ছাড়িয়া দিয়াছে। ভাল তামাশা হইতেছে না দেখিয়া যে দু-চার জন দর্শক উপস্থিত, তাহারাও হাসি-ঠাট্টা করিতেছে।

 এমন সময়ে বাঘটার যেন কি হইল। সে এতক্ষণ খাঁচার এক কোণে শুইয়া ঝিমাইতেছিল। কথা নাই, বার্তা নাই। হঠাৎ লাফাইয়া উঠিয়া, খাঁচার শিক ধরিযা দাঁড়াইয়া ভয়ানক গর্জন। সেই গর্জন শুনিয়া দর্শকেরা হাসি ঠাট্টা ফেলিয়া, দুই লাফে দূরে সরিয়া গেল।

 ব্যাপারখানা কি? এত রাগের ত কোনো কারণই দেখা যায় না—তবে ঐ যে গাঁট্টাগোঁটাটা, লাল-গোঁফওয়ালা জাহাজের মাল্লাটা, নীল কোট পরিয়া থেঁতলো টুপি মাথায় দিয়া, এইমাত্র তামাশা দেখিবার জন্য ঘরের ভিতরে আসিয়াছে, তাহাকে দেখিয়া যদি বাঘ মহাশয়ের ক্রোধ হইয়া থাকে।

 মাল্লা বাঘের খাঁচার দিকে চাহিল, বাঘটাকেও খানিকক্ষণ ধরিয়া মনোযোগ করিয়া দেখিল, তারপর অমনি একেবারে বাঘের কাছে গিয়া উপস্থিত! বাঘ তাহাকে কাছে পাইয়া আরো গর্জন করিয়া উঠিল। দর্শকেরা ভারি আশ্চর্য হইয়া গেল, আর তাহাদের বড় ভয়ও হইল। মাল্লা কিন্তু ততক্ষণে খাঁচার ভিতর হাত ঢুকাইয়া দিয়া, দিব্যি বাঘের মাথা চাপড়াইতে আরম্ভ করিয়াছে—সেটাকে যেন সে বিড়াল ছানা পাইয়াছে। মাল্লা বলিল ‘কি রে বিল্লি, কেমন আছিস ভাই?’ লোকগুলি ভয়ে শিহরিয়া উঠিল। যে-ভয়ঙ্কর দাঁত, এক কামড়েই ত মাল্লার হাতখানাকে একেবারে ছিঁড়িয়া ফেলিবে। বাঘ কিন্তু তেমন কিছুই করিল না। সে তাহার প্রকাণ্ড মাথাটা আনিয়া, আদর করিয়া জ্যাকের (মাল্লার নাম) হাতে ঘষিতে লাগিল, আর আদর পাইলে বিড়ালের গলায় যেমন গুড়গুড় শব্দ হয়, তেমনি শব্দ করিতে লাগিল।

 মুহুর্তের মধ্যে বাহিরের লোকে ইহার খবর পাইয়া দৌড়িয়া ঘরে আসিতে লাগিল, ঘরে আর লোক ধরে না। কত লোক দরজায় এক পয়সার জায়গায় সিকি দুআনি ফেলিয়া দিয়া আর বাকি পয়সার জন্য দাঁড়ায় নাই তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকিতে পারিলেই ঢের মনে করিয়াছে। জন্তুওয়ালার এখন আর দুঃখ করিবার কোনো কারণ নাই। তাহার বাক্স বোঝাই হইয়া