গিয়াছে।
মাল্লা ততক্ষণে জন্তুদের একজন প্রহরীর হাত ধরিয়া বলিল, ‘বিল্লির খাঁচাটা একবার খোলো না ভাই। ও আমার পুরনো বন্ধু; একবার ভেতরে গিয়ে ওর সঙ্গে পুরনো কালের দুটো গল্প করে নিই।’
প্রহরী বেচারা একটু মুশকিলে পড়িল, আর তা হওয়ারই কথা। বাঘকে বিশ্বাস কি? চোখের সামনে একটা লোককে চিবাইয়া খাইবে, এরূপ দেখিতে তাহার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না। আর খাঁচা খুলিলে জ্যাক ঘরে যাইবেন, অথচ বাধ বাহিরে আসিবেন না, এরূপ করাও ত সহজ ব্যাপার নয়। যদি একবার বাহিরে আসিয়া হাই তোলেন তবে তামাশাটা কি রকমেব হইবে! প্রহরী আমতা আমতা করিয়া জিজ্ঞাসা কবিল, ‘তুমি সত্যি বলছ নাকি?’ জ্যাক একটু চটিয়া বলিল, ‘সত্যি বলছি না ত কি? এ কোথাকার বোকা। দেখতে পাচ্ছ না, ও আমাকে চিনতে পেরেছে?’
বাঘ সেই সময় আর-এক হাঁক দিয়াছে, যেন বলিতেছে—‘হ্যাঁ হে হ্যাঁ।’
প্রহরী অনেক ইতস্তত করিয়া একহাতে দরজা খুলিল, আর-এক হাতে একখানা লোহার রুল বাগাইয়া ধরিল। জন্তুগুলি কথা না শুনিলে রুল দিয়া সে তাহাদের শাসন করে।
যেই দরজা খুলিল, অমনি দর্শকেবা তাড়াতাড়ি সরিয়া দাঁড়াইল— পাছে বাঘমহাশয়ের হঠাৎ জলযোগের খেয়াল হয়, আর বাহিরে আসিয়া দু-একটিকে ধরিয়া মুখে দেন! কিন্তু বিল্লি তাহার বন্ধু কে লইয়া ব্যস্ত ছিল, অন্য লোকের কোনো খবর নেয় নাই।
বাঘ অনেকবার মাল্লার চারিদিকে ঘুরিয়া অত্যন্ত স্নেহের সহিত তাহার গায়ে মাথা ঘষিতে লাগিল, তারপর দুই পায়ে দাঁড়াইয়া, হাত দুখানি জ্যাকের কাঁধে তুলিয়া দিল। জ্যাকও তাহার টুপিটা লইয়া বাঘের মাথায় পরাইয়া দিল।
টুপি পরিয়া বাঘকে নেহাত মন্দ দেখিতে হইল না—দর্শকেরা খুবই হাসিয়াছিল। কিন্তু তারপর আরো মজা হইয়াছিল।
টুপিটি ফিরাইয়া লইয়া মাল্লা বলিল, ‘বিল্লি যা শিখিয়েছিলাম, মনে আছে ত? দেখি— লাফা।’ মাল্লা হাত খুব বাড়াইয়া ধরিল, আর বাঘ তাহার ঐ প্রকাণ্ড শরীরটা লইয়া পরিষ্কার তাহার উপর দিয়া লাফাইয়া গেল।
‘আচ্ছা ফিরে এসো।’ বাঘ অমনি আবার লাফাইয়া ফিরিয়া আসিল। ভারি বাধ্য ছাত্র!
প্রহরী ভারি আশ্চর্য হইয়া গেল। সে কত চেষ্টা করিয়াও সেই বাঘকে দিয়া এত কাজ করাইতে পারে নাই। তাই সে জিজ্ঞাসা করিল, ‘ভাই, এত কথা ওকে কি করে শেখালে?’
জ্যাক হাসিয়া বলিল, ‘জাহাজে থাকতে ওকে খাওয়ানোর ভারটা আমার হাতেই ছিল। সেটা দেখছি আজও সে ভোলে নি, কেমন রে বিল্লি?’ বাঘ একটু ঘোঁত করিল, যেন বলিল ‘আরে, না।’
মাল্লা বলিল, ‘আচ্ছা বিল্লি, বোসো ত’—অমনি বাঘ মাটিতে বিড়ালের মতন করিয়া বসিয়া পড়িল। মাল্লা তাহার গায়ে ঠেসান দিয়া বসিয়া এক হাতে তাহার থাবা চুলকাইয়া দিতে লাগিল। তারপর গান ধরিল। বাঘ গানের সঙ্গে ধুপধাপ করিয়া খাঁচার মেজে চাপড়াইতে লাগিল। খাঁচাখানা কাঁপিতে লাগিল। মাল্লা যখন খুব জোরে গাহিতে লাগিল, তখন বাঘ ‘এঁয়াও’ করিয়া তাহার সঙ্গে তান ধরিল। সেই তানের চোটে ঘরের জানলাগুলি খট খট