বল?”
বিনতা বলিলেন, “বাছা, পণে হারিয়া আমি উহাদের দাসী হইয়াছি তাই উহারা আমাদিগকে এমন করিয়া খাটাইয়া লয়।”
ইহাতে যে গরুড়ের মনে খুব কষ্ট হইল, তাহা বুঝিতেই পার। সে তখনই সাপদের নিকট গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হে সর্পগণ, কি হইলে তোমরা আমাদিগকে ছাড়িয়া দিতে পার?”
সর্পেরা বলিল, “যদি তুমি অমৃত আনিয়া দিতে পার, তাহা হইলে তোমাদিগকে ছাড়িয়া দিব।”
এ কথায় গরুড় তাঁহার মাকে বলিল, “মা আমি অমৃত আনিতে চলিলাম, পথে কি খাইব, বলিয়া দাও।”
বিনতা বলিলেন, “বাছা, সমুদ্রের মধ্যে হাজার হাজার নিষাদ (শিকারী ব্যাধ) বাস করে, তুমি তাহাদিগকে খাইও। কিন্তু সাবধান। কখনো যেন ব্রাহ্মণকে খাইও না।”
গরুড় বলিল, “মা ব্রাহ্মণ কিরকম থাকে? আর সে কি করে? সে কি বড় ভয়ানক?”
বিনতা বলিলেন, “যাহাকে খাইলে তোমার পেটের ভিতরে ছুঁচের মত ফুটিবে, গলায় আগুনের মত জ্বালা হইবে, তিনিই জানিবে বাহ্মণ। বাহ্মণের বড় অদ্ভুত ক্ষমতা, নিতান্ত বিপদে পড়িলেও তাহাকে মুখে দিও না। যাও বাছা, তোমার মঙ্গল হউক।”
এইরূপে মায়ের নিকট বিদায় লইয়া গরুড় অমৃত আনিতে যাত্রা করিল। খানিক দূরে গিয়াই সে দেখিল যে, তাহার ভারি ক্ষুধা হইয়াছে। কিছু আহার না করিলে আর চলে না। তখন সে চারিদিক চাহিয়া দেখিল নিকটেই একটা নিষাদের গ্রাম দেখা যাইতেছে। তাহা দেখিবা মাত্র, সে, সেই গ্রামের পথে তাহার বিশাল মুখখানি মেলিয়া রাখিয়া, দুই পাখায় বাতাস করিতে লাগিল। কি ভীষণ বাতাসই সে করিয়াছিল। সে বাতসে ঝড় বহিয়া ঘূর্ণী বায়ু ছুটিয়া, ধূলা উড়িয়া গ্রামখানি সুদ্ধ একেবারে তাহার মুখের ভিতরে আনিয়া উপস্থিত, এখন মুখ বন্ধ করিয়া তাহা গিলিলেই হয়।
নিষাদের গ্রাম খাইয়া গরুড়ের পেট একটুও ভরিল না, লাভের মধ্যে গলা জ্বলিয়া বেচারার কষ্টে এক শেষ হইল। সে এমনি ভয়ানক জ্বালা যে, আর একটু হইলেই হয়ত গলা পুড়িয়া যাইত। গরুড় ভাবিল, “কি আশ্চর্য! একগাল জল-খাবাব খাইলাম, তাহাতে কেন এত জ্বালা? তবে বা কোন খান দিয়া একটা ব্রাহ্মণ আমার পেটের ভিতর ঢুকিয়া গেল। মা ত ব্রাহ্মণ খাইলেই এমনি জ্বালা হওয়ার কথা বলিয়াছিলেন।” এই ভাবিযা সে বলিল, “ঠাকুব মহাশয়। আপনি শীঘ্র বাহিরে আসুন আমি হাঁ করিতেছি।”
ব্রাহ্মণ বলিলেন, “আমার স্ত্রীও যে আছে। আমি একেলা কেমন করিয়া বাহির হইব?”
গরুড় বলিল, “শীঘ্র আপনার স্ত্রীকে লইয়া বাহিরে আসুন। বিলম্ব হইলে হজম হইয়া যাইবেন।”
ব্রাহ্মণকে তাড়া দিবার কোন প্রয়োজন ছিল না, খুবই শীঘ্র শীঘ্র তাঁহার স্ত্রীকে লইয়া ছুটিয়া বাহির হইলেন। গরুড়ের গলাও তৎক্ষণাৎ ঠাণ্ডা হইল। তখন ঠিক একসঙ্গে ব্রাহ্মণও বলিলেন, “কি, বিপদ!” গরুড়ও বলিল, “কি, বিপদ!”
তারপর ব্রাহ্মণ গরুড়কে ধন্যবাদ দিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন, গরুড়ও আবার অমৃত আনিতে যাত্রা করিল। সে সময় তাহার পিতা কশ্যপ সেই পথে যাইতে ছিলেন,