বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 তখন ভগবান কশ্যপ আর বিলম্ব না করিয়া এই-সকল রাজপুত্রকে খুঁজিয়া আনিবার জন্য লোক পাঠাইলেন। ঋক্ষবান পর্বতে ভল্লুকেরা অতিশয় স্নেহের সহিত বিদুরথের পুত্রকে পালন করিতেছিল। মহর্ষি পরাশর সৌদাসের পুত্র সর্বকর্মাকে মাতার ন্যায় মেহরক্ষা করিয়াছিলেন। প্রতর্দনের পুত্র বসকে বাছুরেরা তাহাদের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়াছিল। শিবির পুত্র গোপতিকেও গরুরা পালন করিয়াছিলেন। দিবিরথের পুত্রকে মহর্ষি গৌতম রক্ষা করিয়াছিলেন। বৃহদ্রথ নামক একটি রাজপুত্রকে গৃধ্রুকুট পর্বতে গোলাঙ্গুলগণ (একপ্রকার বানর) পালন করিয়াছিল। ইহা ছাড়া সমুদ্র মরুত্ত রাজার বংশের কয়েকটি বালককে রক্ষা করিয়াছিলেন।

 মহর্ষি কশ্যপ এই-সকল বালককে আনাইয়া পৃথিবীতে রাজা করিলে, তাহারা বিধিমতে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পূর্বক ধর্মকে রক্ষা করিতে লাগিলেন।


শুকদেব

  পূর্বকালে মহাদেব এবং পাবতী কর্ণিকার ফুলের অপরূপ শোভা এবং সুগন্ধে পরিপূর্ণ পর্বতের শৃঙ্গে বাস করিয়াছিলেন; সেই সময় দেবতা, গন্ধর্ব, মুনি, ঋষি সকলে মিলিয়া। তাঁহাদের স্তব করিতেছিলেন।

 সেই সময় ভগবান বাস, সকল গুণে গুণবান দেবতুল্য পুত্র লাভের জন্য মহাদেবের নিকট গিয়া বায়ুভক্ষণ পূর্বক অতি আশ্চর্য তপস্যা করিতে লাগিলেন। এক বৎসর কঠোর তপস্যায় কাটিয়া গেল। তথাপি ব্যাসদেব কিছুমাত্র কাতর বা চঞ্চল হইলেন না। সেই তপস্যার তেজে তাঁহার জটা আগুনের মত উজ্জ্বল হইয়া উঠিল, এবং তদবধি চিরকালই তাহা ঐরূপ উজ্জ্বল দেখা যাইত। ত্রিভুবনের লোক সে তপস্যা দেখিয়া অবাক হইয়া গেল।

 সে তপস্যায় মহাদেব নিতান্ত সন্তুষ্ট হইয়া, স্নেহের সহিত ব্যাসকে বলিলেন, “দ্বৈপায়ন (ব্যাসদেবের অন্য নাম) তুমি শীঘ্রই অগ্নি, বায়ু, পৃথিবী, জল ও আকাশের ন্যায় পবিত্র পরম গুণবাণ পুত্র লাভ করিবে। সেই পুত্র তাহার সমুদয় মন প্রাণ ভগবানের চরণে সমর্পণ পূর্বক ত্রিভুবনে অক্ষয় কীর্তি রাখিয়া যাইবে।”

 ইহাতে ব্যাসদেব যার পর নাই আহ্লাদিত হইয়া মহাদেবকে প্রণাম পূর্বক হোমের আয়োজন করিতে লাগিলেন। হোমের প্রথম প্রয়োজন অগ্নি। তাহার জন্য ব্যাসদেব অরণী কাষ্ঠ দুখানি (সেকালে দিয়াশলাই এর বদলে কাঠে কাঠে ঘষিয়া আগুন বাহির করিতে হইত ঐ কাঠে নাম অরণী) লইয়া ঘর্ষণ করিতেছে। এমন সময় সেই কাষ্ঠ হইতে অগ্নির ন্যায় উজ্জা পরম সুন্দর এক কুমার জন্মগ্রহণ করিলেন। সেই কুমারই ব্যাসদেবের পুত্র, তাহার নাম শুক।

 শুকদেব জন্মগ্রহণ করিবামাত্র, স্বয়ং গঙ্গাদেবী সেখানে আসিয়া তাহার পবিত্র জলে তাহাকে স্নান করাইয়া দিলেন। তাহার সঙ্গে স্বর্গ হইতে তাহার জন্য দণ্ড এবং কৃষ্ণাজিন (পরিবার জন্য কৃষ্ণসার নামক হরিণের ছাল) নামিয়া আসিল। দেবতারা দুন্দুভি বাজাইয়া পুষ্পবৃষ্টি করিলেন।

 স্বয়ং মহাদেব পার্বতীর সহিত আসিয়া মহানন্দে শুকদেবের উপনয়ন করিলেন। ইন্দ্র তাহার জন্য অপূর্ব কমণ্ডলু আর দিব্য বস্তু আনিয়া দিলেন। হংস, সারস, শুক প্রভৃতি পক্ষিগণ আনন্দে কোলাহল পূর্বক তাঁহার চারিধারে উড়িয়া বেড়াইতে লাগিল।