পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬১৩

 পিতার কথায় এই ত্রিশিরা, ইন্দ্রকে তাড়াইয়া নিজে ইন্দ্র হইবার জন্য, ঘোরতর তপস্যা আরম্ভ করিলেন। যাহার চেহারা দেখিলেই আতঙ্ক উপস্থিত হয়, সে যদি আবার এমন বিষম তপস্যা করিতে থাকে, তবে তাহাতে ইন্দ্রেরও ভয় সহজেই হইতে পারে। সুতরাং ইন্দ্র ত্রিশিরার তপস্যা ভাঙ্গিবার জন্য বিধিমতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই সেই উৎকট তপস্যার কোনরূপ হানি করিতে পারিলেন না।

 তখন ইন্দ্রের মনে হইল যে, ইহাকে বধ করা ভিন্ন আর ইহার তপস্যা নিবারণের অন্য উপায় নাই। এই মনে করিয়া তিনি ত্রিশিরার উপরে অতি ভয়ঙ্কর একটা অস্ত্র ছুঁড়িয়া মারিলেন। অস্ত্রের ঘায় ত্রিশিরা পড়িয়া গেলেন বটে, কিন্তু তাহাতে যে তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে, এমন বোধ হইল না। তাহা দেখিয়া ইন্দ্র নিতান্ত ভয় পাইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন, এখন কি করি?

 এমন সময় একজন ছুতার কুড়াল কাঁধে সেইখান দিয়া যাইতেছিল। ইন্দ্র তাহাকে দেখিয়া বলিলেন, “বাপু, তুই এক কাজ করিতে পারিস? তোর ঐ কুড়ালখানি দিয়া এই লোকটার মাথা তিনটা কাটিয়া ফেলত দেখি।”

 ছুতার বলিল, “আমি তাহা পারি না, কর্তা! কাজটা আমার বড়ই অন্যায় মনে হইতেছে, আর তাহা না হইলেও ইহার ঘাড় যে মোটা, আমার কুড়ালে ধরিবে না।”

 ইন্দ্র বলি, “তোর কোন ভয় নাই। আমি তোর কুড়ালকে বজ্রের মত কঠিন করিয়া দিব।”

 ছুতার বলিল, “আপনি কে মহাশয়? আর এমন অন্যায় কাজ করিয়া আপনার কি লাভ হইবে?”

 ইন্দ্র বলিলেন, “আমি ইন্দ্র! তুই কোন চিন্তা করিস না, আমার কাজটা করিয়া দে।”

 ছুতার বলিল, “এমন নিষ্ঠুর কাজ করিতে কি আপনার লজ্জা হইতেছে না? ব্রহ্মহত্যার পাপের কথাও ত একবার ভাবিতে হয়!”

 ইন্দ্র বলিলেন, “তাহার জন্য কোন ভাবনা নাই, আমি অনেক ধর্ম কর্ম করিয়া ব্রহ্মহত্যার দোষ সারাইয়া লইব।”

 তখন ছুতার যেই তাহার কুড়াল দিয়া ত্রিশিরার মাথাগুলি কাটিল, অমনি তাঁহার তিনটি মুখ হইতে তিত্তির, চড়ই প্রভৃতি পক্ষী উড়িয়া বাহির হইতে লাগিল।

 এইরূপে ত্রিশিরাকে বধ করিয়া ইন্দ্র নিশ্চিন্ত মনে ঘরে চলিয়া আসিলেন।

 ত্রিশিরার মৃত্যুব কথা শুনিয়া ত্বষ্টার যে খুব রাগ হইয়াছিল, এ কথা আমরা সহজেই অনুমান করিতে পারি। তিনি রাগে অস্থির হইয়া আচমন পূর্বক অগ্নিতে আহুতি দিবামাত্র অতি ভীষণ এক দৈত্য উৎপন্ন হইল। দৈত্যকে দেখিয়া ত্বষ্টা বলিলেন, “বড় হও।” অমনি সে দেখিতে দেখিতে আকাশের মত উঁচু হইয়া গেল। তারপর সে আকাশকেও ছাড়াইয়া গেল তারপর আর কত বড় হইল তাহা আমি বলিতে পারি না।

 সেই দৈত্যের নাম বৃত্র। বৃত্র হাত জোড় করিয়া ত্বষ্টাকে বলিল, “মহাশয়! আজ্ঞা করুন, কি করিতে হইবে?”

 ত্বষ্টা বলিলেন, “তুমি স্বর্গে গিয়া ইন্দ্রকে সংহার কব!”

 এ কথায় বৃত্র তখনই স্বর্গে গিয়া কি কাণ্ড যে উপস্থিত করিলে, তাহা কি বলিব?