পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র
অগস্ত্য

 অসুরেরা দেবতাদের শত্রু, তাই তাহাদিগকে মারিবার জন্য দেবতারা সর্বদাই চেষ্টা করেন। একবার ইন্দ্রের হুকুমে অগ্নি আর বায়ু দুজনে মিলিয়া অসুরদিগকে পোড়াইয়া ফেলিতে গেলেন। বাতাস যদি আগুনের সাহায্য করে, তবে তাহার তেজ বড়ই ভয়ংকর হয়। হাজার হাজার অসুর সেই আগুনের তেজে পুড়িয়া মরিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে আর সকল অসুরই মারা গেল, খালি পাঁচজন অসুর যে সমুদ্রের ভিতরে লুকাইয়া ছিল, অগ্নি আর বায়ু তাহাদিগকে মারিতে পারিলেন না।

 সেই পাঁচটা অসুর যে কেবল জলের ভিতরে ঢুকিয়া প্রাণ বাঁচাইল তাহা নহে, মাঝে মাঝে জলের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া সংসারের সকল লোককে বিষম জ্বালাতনও করিতে লাগিল। তখন ইন্দ্র বলিলেন যে, “অগ্নি আর বায়ু সাগর শুষিয়া ফেলুক।” কিন্তু অগ্নি আর বায়ু তাহাতে রাজি হইলেন না, তাঁহারা বলিলেন, “এই সাগরের মধ্যে কত কোটি কোটি জীব আছে যাহারা কোনো অপরাধ করে নাই; আমরা সাগর শুষিতে গেলে তাহারা মারা যাইবে। এমন পাপ আমরা করিতে পারিব না।”

 এ কথায় ইন্দ্র ভয়ানক চটিয়া বলিলেন, “তোমরা আমার হুকুম অমান্য করিলে, এই অপরাধে তোমাদিগকে মুনি হইয়া পৃথিবীতে জন্মিতে হইবে।”

 ইন্দ্র এই কথা বলিবামাত্র অগ্নি আর বায়ু স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে পড়িয়া গেলেন এবং দুজনে মিলিয়া একটি মুনি হইয়া একটা কলসীর ভিতর হইতে বাহির হইলেন। এই মুনির নামই অগস্ত্য। ইনি বড়ই আশ্চর্যরকমের লোক ছিলেন;আর ইনি যে মাঝে মাঝে এক একটা কাজ করিতেন তাহাও অতিশয় অদ্ভুত।

 অসুরেরা জলের ভিতর হইতে আসিয়া অত্যাচার করিয়া যখন দেবতাদিগকে নিতান্তই ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিল, তখন বিষ্ণু তাঁহাদিগকে শিখাইয়া দিলেন যে, “তোমরা গিয়া অগস্ত্যকে ধর। তিনি ইচ্ছা করিলেই সাগরের জল খাইয়া ফেলিতে পারেন, আর তাহা হইলে তোমাদেরও অসুর মারিবার খুব সুবিধা হইবে।”

 এ কথায় দেবতারা অগস্ত্যের নিকটে আসিয়া বলিলেন, “ঠাকুর আমাদের একটি কাজ তো না করিয়া দিলেই নয়। আপনি যদি দয়া করিয়া একটিবার সাগরের জলটুকু খাইয়া ফেলেন, তবেই আমরা অসুরগুলিকে মারিতে পারি, নচেৎ আমাদের বড়ই বিপদ।”

 অগস্ত্য বলিলেন, “আচ্ছা, তবে চলুন।” এই বলিয়া তিনি সমুদ্রের জল খাইতে চলিলেন, আর সংসারের লোক ছুটিয়া তাহার তামাশা দেখিতে আসিল। সেই অদ্ভুত ব্যাপার দেখিয়া তাহারা কি আশ্চর্য যে হইয়াছিল, আর অগস্ত্যের কিরূপ প্রশংসা যে করিয়াছিল, তাহা বুঝিতেই পার। দেখিতে দেখিতে অগস্ত্য সাগরের সকল জল খাইয়া শেষ করিলেন, আর দেবতারাও মনের সুখে দুষ্ট অসুরদিগকে ধরিয়া মারিতে লাগিলেন।

 ইম্বল আর বাতাপি নামে দুটা দৈত্যকে অগস্ত্য যেমন করিয়া মারিয়াছিলেন, তাহাও অতি আশ্চর্য। ইম্বল বড় ভাই, বাতাপি ছোট ভাই; মণিমতী পুরীতে তাহাদের বাড়ি। একবার ইম্বল