দেবতারা যারপরনাই সন্তুষ্ট হইয়া হনুমানকে বর দিতে লাগিলেন। সেই সকল বরের জোরে হনুমান চিরজীবী হইয়া গেল। কোনো দেবতা বা যক্ষ, গন্ধর্ব বা মানুষের কোনো অস্ত্রে তাহার মরণের ভয় রহিল না। কেহ শাপ দিয়া তাহার প্রাণনাশ করার পথ অবধি বন্ধ হইল। তাহা ছাড়া ব্রহ্মা বলিলেন, “তুমি ভগবানকে জানিতে পারিবে, আর যখন যেমন ইচ্ছা, তেমনি রূপ ধরিতে পারিবে।” সূর্য বলিলেন, “আমার তেজের শতভাগের এক ভাগ তোমাকে দিলাম। আর একটু বয়স হইলে আমি তোমাকে লেখাপড়া শিখাইব:তাহা হইলে তুমি খুব বলিতে কহিতে পারিবে।”
বর পাইয়া হনুমান বড় লোক হইয়া গেল! তবে অবশ্য;ইহার সকল ফল ফলিতে সময় লাগিয়াছিল। শিশুকালে তাহার স্বভাব অন্যান্য বানরছানার চেয়ে বেশি উঁচুদরের ছিল না। মুনিদের আশ্রমে গিয়া সে দৌরাত্মটা যা করিত, সে আর বলিবার নয়। তাহার পিতামাতা কত নিষেধ করিতেন, কিন্তু সে কি নিষেধ শুনিবার পাত্র? তাহার উৎপাতে মুনিদের কোশাকুশী, ঘটি, বাটি, কাপড়-চোপড় কিছু আগলাইয়া রাখিবার জো ছিল না। এদিকে আবার তাহাকে শাপ দিয়াও ফল নাই, কারণ, ব্রহ্মার বরে শাপে মরিবার ভয় তাহার কাটিয়া গিয়াছে আর তাহাকে দেখিয়া তাঁহাদের কতকটা মায়াও হইত। কাজেই তাঁহারা নিরুপায় হইয়া তাহার অত্যাচার সহ্য করিতেন, আর ভাবিতেন, উহাকে বেশি ক্লেশ না দিয়া কি উপায়ে একটু জব্দ করা যায়। শেষে অনেক বুদ্ধি করিয়া তাঁহারা তাহাকে এই শাপ দিলেন, “যা বেটা, তোর যত ক্ষমতা তাহার কথা তুই একেবারে ভুলিয়া যা। বড় হইলে কেহ সেই ক্ষমতার কথা তোকে মনে করাইয়া দিবে, তখন তুই অনেক অদ্ভুত কাজ করিবি।”
তখন হইতে হনুমান সামান্য বানরছানার ন্যায় নিতান্ত ভয়ে ভয়ে চলে, আর দূর হইতে কাহাকেও দেখিলেই প্রাণপণে ছুটিয়া পলায়। কাজেই মুনিদেরও আর তাহার অত্যাচার সহিতে হয় না। যাহা হউক, সে এর মধ্যে সূর্যের নিকটে ঢের লেখাপড়া শিখিয়া ফেলিল। মুনিদের বাড়ি গিয়া সে যাহাই করুক, লেখাপড়ায় যে সে খুব লক্ষ্মীছেলে ছিল, একথা স্বীকার করিতেই হইবে। কি পরিশ্রম করিয়াই না সে লেখাপড়া শিখিয়াছিল। সূর্য তো আর এক জায়গায় বসিয়া থাকেন না, যে, পুঁথি লইয়া তাহার কাছে গিয়া বসিলেই কাজ হইবে। হনুমানকে উদয় হইতে অন্ত পর্বত পর্যন্ত রোজ তাঁহার পিছু পিছু ছুটাছুটি করিয়া পড়া বুঝিয়া লইতে হইত। তাহার ফলে সে বিদ্বানও হইয়াছিল বড়ই ভারি রকমের। এমন পণ্ডিত অতি অল্পই জন্মাইয়াছে।
বিশ্বকর্মার নাম তোমরা সকলেই শুনিয়াছ। বিশ্বকর্মা দেবতাদের কারিগরদের দেবতা। এই দেবতার একটি মেয়ে ছিল, তাহার নাম সংজ্ঞা; কেহ কেহ তাহাকে উষা আর সুরেণু বলিয়াও ডাকিত।
বাপের ঘরে সংজ্ঞা সুখেই ছিলেন। কিন্তু, শেষে তাঁহার পিতা যখন সূর্যদেবের সহিত তাঁহার বিবাহ দিলেন, তখন হইতেই বেচারীর দুঃখের দিন আরম্ভ হইল। সূর্যের যে কি