পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৮৯

বলেন।

 কাজেই বোলতা ঘরে এলেই আমরা একটু ব্যস্ত হই; কখন কাকে কামড়ায়, তার ঠিক কি? এর ওষুধ হচ্ছে পাখা হাতে নিয়ে বসা, আর বোলতা খানকা বেশি কাছে এলে তাকে ঠাঁই করে মারা। তখন সে মাটিতে পড়ে ফড়্‌ফড়্‌ করে ঘুরতে থাকে, বেশি লাগলে অজ্ঞান হয়ে যায়, কিন্তু সহজে মরে না। খানিক বাদেই দেখবে, সে উঠে বসেছে; আর খানিক বাদে উড়তে থাকবে। তখনো হয়তো তার মাথা ঘোরা একেবারে সারবে না; হয়তো সে মাতালের মতো টলতে টলতে উড়বে, আর দেয়ালে টক্কর খেতে খেতে ভাববে ‘বড্ড সামলে গেছি!’ যাহোক, আর-একটু পরেই সে বেরিয়ে চলে যাবে।

 যদি বোলতা মরে যায়, তবে অমনি পিঁপড়েরা এসে তাকে নিয়ে যাবার আয়োজন করবে। একটা বোলতাকে নিয়ে যেতে কটা পিঁপড়ে লাগে আমি তার হিসাব করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম যে কাজটি বড়ই কঠিন। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটি পিঁপড়ে একটা বোলতাকে ধরেছে, কিন্তু তাদের সকলে একদিকপানে টানছে না। একদল যেদিকে টানছে, আরেকদল টানছে ঠিক তার উল্টো দিকে। তার মধ্যে আবার দশ-বারোজন বোলতাটার উপরে উঠে খালি পাইচারি করছে। তারা টানছে তো না-ই, লাভের মধ্যে অনর্থক বোঝা বাড়াচ্ছে। আমি জানতাম যে, পিঁপড়েরা ভারি বুদ্ধিমান জীব; এখন দেখছি, তারা মাঝে মাঝে নিতান্ত বোকার মতো কাজও করে। কাজেই আমার আর হিসাব করা হল না; শুধু এইটুকু বুঝলাম যে বুঝে শুনে টানলে, চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটার চেয়ে ঢের কম পিঁপড়েতে একটা বোলতাকে সমান জমির উপরে টেনে নিয়ে যেতে পারে।

 অনেক সময় বোলতাটা মরবার আগে পিঁপড়েগুলো এসে তাকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। তখন বোলতা তাদের এক-এক জনকে এমনি লাথি মারে যে, তাতেই তাদের দুতিনশ হাত (পিঁপড়ের হাতে) দূরে গিয়ে ছিটকিয়ে পড়তে হয়।

 আমি যে বোলতাগুলোর কথা বলছি, তারা দেখতে ভারি সুন্দর। গায়ের রঙটা, তোমরা যাকে চকোলেট রঙ বল, তেমনি। কপাল আর দুটি শুঁড়ের গোড়া দুটি খানিক হলদে, খানিক চকোলেট। দুপাশে দুটি বড়-বড় চোখ, তার প্রত্যেকটি হাজার-হাজার চোখ দিয়ে তয়ের হয়েছে। তাছাড়া মাথার উপরে আরো তিনটি ছোট-ছোট চোখ আছে।


ফ্ল্যামিঙ্গো

 জানোয়ারের মধ্যে যেমন জিরাফ, পক্ষীর মধ্যে তেমনি ফ্ল্যামিঙ্গো। শরীরের আন্দাজে ঠ্যাং দুটি বেখাপ্পারকম লম্বা আর তেমনি লম্বা গলাটি। পৃথিবীর নানা জায়গায়—আমেরিকায়, আফ্রিকায়, এমন-কি, আমাদের দেশেও কোনো কোনো জায়গায় এ-পাখি দেখা যায়। এরা জলের ধারে দল বেঁধে থাকে। আমেরিকার কোনো কোনো জায়গায় এক সঙ্গে হাজার হাজার ফ্ল্যামিঙ্গো বাস করে এমন অনেক সময়েই দেখা যায়। জলের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে শামুক গুগলি চিংড়ি আর ছোট-ছোট মাছ ধরে খেতে ফ্ল্যামিঙ্গোরা খুবই ভালোবাসে কিন্তু তা যদি না জোটে, তা হলে ধান, শস্য, খুদ, এমন-কি, রান্না পায়েস পর্যন্ত খেতে তার

উপেন্দ্র—১১২