পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৯১

ভালো উপায় হচ্ছে, তাকে কোলে নিয়ে ধীরে সুস্থে তারা থাবা পরীক্ষা করে দেখ। থাবার উপরে আর নিচে আঙুল দিয়ে টিপ দাও, অমনি নখগুলি বেরিয়ে আসবে। টিপ ছেড়ে দাও, আবার সেগুলো ভিতরে ঢুকে যাবে। বাঘের থাবায় ধরে দেখাবার সুবিধা নাই; আর, থাকলেও সেকাজ করতে তোমাদের কখনো বলি না,—যদি সেটা মরা বাঘ না হয়। কিন্তু দেখতে পারলে বুঝতে যে, বাঘ আর বিড়াল একই রকমের জানোয়ার, খালি ছোট বড়র তফাত। বাঘ, সিংহ এরা সব বিড়ালেরই কুটুম্ব। গরম দেশে এরকমের জন্তু ঢের আছে। কোনোটা হলদে, কোনোটা ছেয়ে কোনোটা কটা, কোনোটা কালো, কোনোটার গায়ে ডোরা, কোনোটার গায়ে চক্র। কোনোটা মস্ত বড়, তাকে বলি বাঘ, কোনোটা ছোট, তাকে বলি বিড়াল। আসলে এরা সকলেই ভাই বেরাদর; এরা হচ্ছে বিড়াল বংশ।

 তাই বলছিলাম, বিড়াল যে বাঘের মাসি, এ কথা আমি কতক মানি। কিন্তু শেয়াল যে বাঘের ভাগ্নে, এটা নিতান্ত বাজে কথা; শেয়াল বাঘের কেউ নয়। শেয়ালের দাঁত নখ ছোটছোট আর সরু-সরু। বাঘের নখ দাঁতের সঙ্গে তার তুলনাই হয় না। আর শেয়ালের এমন ক্ষমতা নাই যে ইচ্ছামতো তার নখ বার করে বা গুটিয়ে রাখে। তার সোজা নখগুলো খোঁটার মতো তার আঙ্গুলের আগায় বসান থাকে।

 ভেবে দেখতে গেলে, কুকুরের সঙ্গে শেয়ালের চেহারা খুব মিলে। কুকুরের নখ দাঁত শেয়ালেরই মতো। নেকড়েরও তাই। এরা সব ভাই বেরাদর —এরা কুকুর বংশ।

 এক হিসাবে কিন্তু বাঘ বিড়াল আর শেয়াল কুকুর এক বংশ না হলেও, একদল বলা যেতে পারে। এরা সকলে মাংস খায়। গোরু ঘোড়া মাংস খায় না, তারা আরেক দল। এদের দাঁত আর নখও মাংস-খেকো জানোয়ারের দাঁতের মতো ধারাল নয়। যাহোক এখন আমাদের অত খুঁটিনাটির খবর না নিলেও চলবে। তার চেয়ে কাজের কথা এই হচ্ছে যে এই যে বাঘ শেয়াল আর গোরু ঘোড়ার দুটো দল হল, এদের মধ্যে আবার এক বিষয়ে মিল আছে—এরা সকলেই শিশুকালে মায়ের দুধ খায়। কাজেই এদের দুটো দল হলেও, ধর্মটা একই দেখা যাচ্ছে। পাখিরা শিশুকালে মায়ের দুধ খায় না, মাছেরাও খায় না তাদের ধর্ম অন্যরকম। আবার, বাঘ, শিয়াল, গোরু, ঘোড়া, পাখি, মাছ, এদের মধ্যেও একটা মস্ত কথায় এমন মিল আছে যে, তাতেই এদের সকলের এক জাত করে দিয়েছে। পিঠে একটি শিরদাঁড়া, আর গায়ে হাড় এদের সকলেরই আছে।

 হাড় কি সকল জন্তুর থাকে? ফড়িঙের হাড় নাই, কেঁচোর নাই, শামুকের নাই,—আরো কত জন্তুর নাই। যাদের শিরদাঁড়া আছে, আর যাদের নাই, এই হল তবে প্রাণীদের দুই জাত। একটা জন্তুর পরিচয় জানতে হলে, দেখ, কত কথার, কত খবর নিতে হয়। আগে দেখব সে কোন জাতের, তারপর দেখব সে কোন ধর্মের, তারপর দেখব সে কোন দলের, তারপর দেখব সে কোন বংশের। এত করে তবে তার যথার্থ পরিচয়টি পাওয়া যাবে। ঠিক যেন চিঠির ঠিকানা— অমুক শহরে, অমুক গলিতে, এত নম্বরের বাড়িতে, পরমকল্যাণীয়, শ্রীমান অমুকের হাতে পঁছছে। তা হলে তো শ্রীমান চিঠিখানি পাবেন, নইলে শুধু খাম টিকিটের পয়সা খরচ।