পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৯০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 বাড়ীটি কিন্তু যতদূর সম্ভব, সমুদ্রের কাছে হওয়া চাই। সমুদ্রের উপর দিয়া যে স্বাস্থ্যকর বায়ু বহিয়া আসে, তাহ সমুদ্রের কূল ছড়িয়া বেশি দূরে যায় না। সমুদ্রের কুল হইতে খানিক দূরে গিয়াই এই হাওয়া ক্রমে থামিয়া যায়, আর সেইখান হইতেই জ্বর জারির মুল্লুক আরম্ভ হয়। পুরীতে এ বিষয়ে খুব অসুবিধা। সমুদ্রের ধারে সেখানে বেশি বাড়ি নাই, যাহা আছে তাহার অতি অল্পই দেশী লোকেরা পায়। যাহা হউক, দু-একটা সুন্দর বাড়ি দেশী লোকদের জন্যও আছে। আর ডাকবাঙ্গালা তো আছেই, তাহার কুয়ার জলও অতি চমৎকার।

 সেখানে কুয়ার জলই খাইতে হয়। সমুদ্রের জল লোনা। সে জল খাইতে তো বিশ্রী লাগেই খাইলে গা বমিবমি করে, পেটের অসুখও হয়। যদি বেশি করিয়া ক্রমাগত খায়, তবে গলা ফুলিয়া যায়, আর আরো কত অসুখ হয়, তাহা আমি জানি না।

 আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সেখানকার ডাকবাঙ্গালার কুয়াটি সমুদ্রের খুব কাছে সমুদ্রের ধারের বালির উপরেই খোঁড়া হইয়াছে অথচ তাহার জল লোনা হওয়া দূরে থাকুক, তেমন পরিষ্কার মিষ্ট জল পুরীর আর কোনো কুয়াতে নাই!

 ডাকবাঙ্গালার জায়গাটি অতি সুন্দর। বাঙ্গালাটি সমুদ্রের বালির উপরেই, তাহার বারান্দায় বসিয়াই সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

 সমুদ্রের সৌন্দর্যের কথা আর একটু বেশি করিয়া না বলিলে হয়তো অনেকেরই রাগ হইবে, আর আমারও ভালো লাগিবে না। সমুদ্রের অনেক ব্যাপার অতি সুন্দর; দেখিলে আমোদও হয়, শিক্ষাও হয়, চোখের তৃপ্তি তো আছেই। সমুদ্রের সাধারণ দৃশ্য সূর্যোদয়, সূর্যাণ্ড, জীবজন্তু প্রভৃতি সকলের কথাই বলা আবশ্যক।

 যাহারা আর কখনো সমুদ্র দেখে নাই, তাহারা প্রথমে সমুদ্র দেখিয়া অনেক সময় নিরাশ হয়। তাহারা মনে করিয়াছিল, আরো ঢের বড় দেখিব। সমুদ্রটা ঘরের মেঝের মতন সমান নহে কচ্ছপের পিঠের মতন চিপিপানা। তাহার মাঝখানটা উঁচু হইয়া পিছনের অংশকে আড়াল করিয়া দেয়। তোমরা হয়তো বলিবে, ইহা তো অতি সহজ কথা, আমরা সকলেই জানি।’ তোমরা যে অনেক কথা জানো তাহাতে আমি কোনোরূপ সন্দেহ উপস্থিত করিতে যাইতেছি না। তোমাদের মতন থাকিতে আমরাই কি আর কম জানিতাম। গ্রামের ইজ্দি ডিস্পিক্শন অফ দি আর্থ, কমলালেবুর দক্ষিণে ২৭ মাইল চাপা জাহাজ সমুদ্রে যেতে ডুবে যায়; কোমর জলে খানিক ডোবে, মাঝারি জলে মাঝারি ডোবে, বেশি জলে মাস্তুল অবধি ডোবে” এসব আমাদের ছেলেবেলায়ও ছিল। তবে, এখন নাকি আমাদের অনেক বয়স হইয়া গিয়াছে তাই অত কথা আর চট্‌ করিয়া মনে পড়ে না। একদিন সমুদ্রের ধারে গিয়া দেখি যে জেলেরা ডোঙ্গায় চড়িয়া অনেক দূরে মাছ ধরিতেছে। এ ডোঙ্গা কিন্তু আমাদের দেশের ডোঙ্গার মতন নয় অর্থাৎ তাহা ডোঙ্গাই নয়। বাঁকা বাঁকা তিন-চার খানা আস্ত কাঠ জলে ভাসে। এই কখানাকে দড়ি দিয়া বধিলে হাতের অঞ্জলির মতন হয়, তাহার নাম কাটামারণ;তাহতেই চড়িয়া ওখানকার জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরিতে যায়। তাহার কথা পরে বলিব। এখন যাহা বলিতেছিলাম শুন। কাটামারণে চড়িয়া জেলেরা অনেক দূরে চলিয়া গিয়াছে। ডাঙ্গার উপর হইতে দেখিলাম যে উহাদের অনেক পিছনেও সমুদ্র দেখা যায়। তারপর ডাঙ্গা হইতে নামিয়া জলের কাছে গেলাম; তখন দেখি যে সেই কাটামারণগুলির পিছনে আর সমুদ্রের ততখানি দেখা যায় না। তখন আমার সেই পুস্তকে পড়া বিদ্যার কথা