পাতা:ঊর্ম্মিমুখর.djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՏ . উৰ্ম্মিমুখর আজ ঘুম থেকে উঠে যখন হাটে যাই, তখন মেঘলা করে এসেচে, বেশ লাগলো। বনে বনে কঁঠাল গাছে কাঠাল ফলে আছে, পান পাতার মত বড় বড় লতা উঠেচে গাছে গাছে – ঘন কালো বর্ষায় মেঘ করেচে নৈঋত কোণে। গোপাল নগর পৌছতেই রাধাবল্লভ নিয়ে গেল ওদের বাড়ী । রাধাবল্লভের স্ত্রী পাচী আমাদের গায়ের মেয়ে । ছেলেবেলায় এক সঙ্গে খেলা করেচি বকুল তলায় বিলবিলের ধারে, যুগল বেষ্টিমের কামরাঙা তলার পথে । ওরা জাতে জেলে। ওর বিয়ের পর ওকে আমি এই প্রথম দেখলুম বোধ হয় বাইশ তেইশ বছর পরে। দেখে বড় স্নেহ হোল—জড় হয়ে এসে প্ৰণাম করলে। কথাবার্তা খুব বিনীত, নম্রসন্ত্র। একটু ভয়ে ভয়ে কথা বল্পে। আমি ব্রাহ্মণ, ওর বাড়ীতে গিয়েচি পাছে আমার কোনো অসম্মান হয়, এই তয়েই তটস্থ । ওর ছেলেকে দিয়ে একটু সন্দেশ ও জল পাঠিয়ে দিলে। তাও ভয়ে ভয়ে । ভাবলে আমি থাবো কি না । নিজের হাতে সাহস করে নিয়ে আসতে পারলে না। আমি ওকে দেখিয়ে সে সন্দেশ ও জল খেলুম, ওর মনে দ্বিধা ও সঙ্কোচের কোনো অবকাশ দিলুম না। -- ও পড়ে গিয়েচে বড় বিপদে । ওর বড় মেয়ের বয়েস প্রায় কুড়ি । মেয়েট দেখতে শুনতে ভাল, লেখাপড়াও শিখেচে । ওদের জাতে ভাল ছেলে বড় একটা পাওয়া যায় না—অনেক খুজে পেতে বাপে বিয়ে দিয়েছিল ওরই মধ্যে একটু আধটু শিক্ষিত একটা ছেলের সঙ্গে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ীতে ওর ওপর বড় খারাপ ব্যবহার করে বলে বাপ মেয়েকে আর সেখানে পাঠাতে চায় না । সে জামাই আবার বিয়ে করেচে। এই সব নিয়ে গোলমাল । ওরা অলে পাড়ার মধ্যে বাস করে, ভাল কোঠ বাড়ী, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থানে । ওর স্বজাতির। সেজন্তে ওদের দু চোখ পেতে দেখতে পারে না । তার ওপর মেয়েট নাকি সৰ্ব্বদা বই পড়ে। কি সৰ্ব্বনাশ ! জেলের মেয়ে বই পড়বে কি ? ওদের পাড়ার লোক ষড়যন্ত্র করে একরাত্রে ওদের ঘরে ঢুকে কিছু টাকা কাপড় চোপড় চুরি করে নিয়ে গিয়েচে আর এক বাক্স ভাল ভাল বই সব ছিড়ে দিয়ে গিয়েচে । পাচী লেখাপড়া জানে না, কিন্তু বইগুলোর শোক, ওর লেগেচে খুব। " আমাকে কাদতে কাঁদতে বল্লে—আসুন তো দাদা দেখুন দিকি, আপনি তো লেখাপড়া জানেন, আমার এক বাক্স বই, খুড় শ্বশুরের কেন্ম—বইগুলো ছিড়ে