পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

নির্লজ্জের ন্যায় নৃত্য করিত, কখন বা ভগবানের সংস্পর্শ সুখে রোমাঞ্চিত হইয়া প্রগাঢ় প্রণয়ানন্দে সুখ-অশ্রুতে সিক্ত ও মুদিত চোখে তুষ্ণীভাব অবলম্বন করিত।

 মহাব্রহ্মজ্ঞ ভক্তরাজ প্রহ্লাদের এই চরিত্রের সব কয়টিরই রসচিত্র বা রসপ্রকাশ গীতঞ্জলিতে পাওয়া যাইবে। কৌতূহলী পাঠক একটু মিলাইয়া পাঠ করিলেই এই উক্তির সত্যতা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হইতে পারিবেন। অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথ যে ব্রহ্মজ্ঞ ভক্তরাজ পুরুষ, ইহাতে আর সন্দেহ থাকিবে না।


 একটি গান উদ্ধৃত করিয়া গীতঞ্জলির আলোচনার উপসংহার করা যাইতেছে। গানটিতে রবীন্দ্রনাথ নিজের একটি চরম অভিলাষ জানাইয়া বিদায় লইয়াছেন। এই বিদায়-অভিলাষ কোন্ পুরুষের, তাহাও গানখানিতেই জানা যাইবে—

যাবার দিনে এই কথাটি
বলে যেন যাই—
যা দেখেছি যা জেনেছি
তুলনা তার নাই।

এই জ্যোতিঃ সমুদ্র মাঝে
যে শতদল পদ্ম রাজে
তারই মধু পান করেছি,
ধন্য আমি তাই—
যাবার দিনে এই কথাটি
জানিয়ে যেন যাই।

বিশ্বরূপের খেলাঘরে
কতই গেলেম খেলে,
অপরূপকে দেখে গেলেম
দুটি নয়ন মেলে।

পরশ যাঁরে যায় না করা
সকল দেহে দিলেন ধরা।
এইখানে শেষ করেন যদি
শেষ করে দিন তাই—
যাবার বেলা এই কথাটি
জানিয়ে যেন যাই।

 কি তিনি জানাইয়া গিয়াছেন, সে প্রশ্ন নিশ্চয়ই আমাদের শান্ত হইয়াছে। তিনি ব্রহ্মকে জানিয়াছেন, এই একটিমাত্র কথাই রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন ভরিয়া নানাভাবে জানাইয়া গিয়াছেন।