পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

হইলেও প্রারম্ভেই নিজের অস্তিত্ব স্বীকার করিয়া লইতে হয়। দেখা যায় যে, আত্মার অস্তিত্ব এমনই একটি ব্যাপার, যাহা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না, বরং কোন কিছু প্রমাণের পূর্বে যাহার অস্তিত্ব স্বীকৃতিরই প্রথম অপেক্ষা করে। এক কথায় —আত্মা স্বতঃসিদ্ধ।

 আমি আছি, ইহা স্বতঃসিদ্ধ এবং এই আমিই আত্মা। এখন প্রশ্ন থাকে, এই ‘আমি’ বা আত্মা আসলে কি? এই আমি-র আসল রূপ অর্থাৎ স্বরূপ জানিতে গিয়াই যেখানে ঋষিগণ উপনীত হইয়াছেন— তিনিই ব্রহ্ম। এই স্তবঃসিদ্ধ আত্মারও তিনিই আশ্রয়।

 আত্মাই যদি স্বতঃসিদ্ধ হন, তাঁহার অস্তিত্বই যদি প্রমাণের কোন অপেক্ষা না রাখে, তবে সেই আত্মারই যিনি আশ্রয়, তাঁহার সম্পর্কে প্রমাণের প্রশ্ন উঠিতে পারে না এবং সে প্রমাণ-প্রচেষ্টারও কোন অর্থ হয় না। কাজেই, ব্রহ্ম আছেন, ইহা প্রমাণ করিতে না পারিলেও তিনি যে আছেন, ইহা মানিতে আমরা বাধ্য।

 তাঁহাকে প্রমাণ করিতে না পারিলেও তাঁহাকে জানিতে আমরা পারি। তাঁহাকে যাঁহারা জানিয়াছেন, তাঁহারাই ঋষি। রবীন্দ্রনাথও সেই ঋষি, ইহা প্রথমে মানিয়া লইয়াই পরে প্রমাণের প্রচেষ্টায় আমরা ব্রতী হইয়াছিলাম।

 প্রচেষ্টার প্রথম পাদেই দেখা গিয়াছে যে, ব্রহ্ম যে আছেন, ইহাই প্রমাণ করা যায় না। আর সেই ব্রহ্মকে কেহ জানিয়াছেন কি না, ইহা আমরা প্রমাণ করিব কি উপায়ে?

 এই বিপদ বা সমস্যা উত্তীর্ণ হইবার জন্যই বিশেষ একটি পথ আমাদিগকে নির্বাচন করিতে হইয়াছে—সাধকের ব্যক্তিগত উপলব্ধির বিশ্লেষণ। এই উপলব্ধিকে একমাত্র উপনিষদের কষ্টিপাথরে ঘষিয়াই আমরা ইহার বিচার ও মূল্য নির্ধারণ করিয়াছি। সাধকের ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং শাস্ত্রবাক্য—এই পথই আমরা অনুসরণ করিয়াছি রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে।

 রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত উপলব্ধির উপর নির্ভর করিয়াই আমাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিবার চেষ্টা আমরা করিয়াছি। তাঁহার ব্যক্তিগত উপলব্ধি ব্যতীত অপর কোন কিছুকে সাক্ষ্য হিসাবে বিচার ক্ষেত্রে আমরা উপস্থিত করি নাই, একমাত্র গীতাঞ্জলি ছাড়া।

 গীতাঞ্জলিকে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সাধনার বিবরণ বলিয়া গ্রহণ করিতে আমরা বাধ্য হইয়াছি। রবীন্দ্রনাথের রচনাবলীকেও সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থিত করিবার