বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

করিয়া জ্ঞানের সপ্তম ভূমিতে যিনি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন, কেবল তাঁহারই দৃষ্টি হইতে আচ্ছাদন চির-অপসৃত হয়, কেবল তাঁহারই দৃষ্টি নিত্য মুক্ত।

 রবীন্দ্রনাথ বিশেষ কোন সাধন-পন্থা অনুসরণ করিয়া একটির পর একটি প্রজ্ঞাভূমি জয় করিয়া অবশেষে আত্মজ্যোতি দর্শন করেন নাই। কাজেই সপ্তম ভূমির প্রজ্ঞা জ্যোতি অকস্মাৎ উদ্ভাসিত হইলেও সে-ভূমি তাঁহার লব্ধ ভূমি হয় নাই। তাই দৃষ্টিতে আবার পূর্বের আচ্ছাদন নামিয়া আসিয়াছে।

 যোগসূত্রে মহর্ষি পতঞ্জলি আরও বলিয়াছেন, ‘যে যোগীর চিত্ত বিবেকপথে কৈবল্যের দিকে প্রবাহিত হইয়াছে ছিদ্র পাইলে তাহার চিত্তও পূর্ব সংস্কারসমূহে আচ্ছন্ন হয়।’ সাধনায় যাঁহার সম্প্রজ্ঞাত সমাধি সিদ্ধ হইয়াছে, সেই উচ্চ-সাধক সম্বন্ধেই এই উক্তি যোগসূত্রে করা হইয়াছে।

 আর রবীন্দ্রনাথের আত্মজ্যোতিদর্শন বিনা সাধনে এবং অকস্মাৎ ঘটিয়াছে, কাজেই তাঁহার চিত্ত অবিদ্যাদি ক্লেশ ও পূর্ব সংস্কারসমূহ হইতে এত সহজে এবং এত সত্বর কখনো মুক্ত হইতে পারে না, তাহা সাধনা সাপেক্ষ। এই কারণেই ব্রহ্মজ্যোতি রবীন্দ্রনাথের নিজেকে ও জগৎকে দেখাইয়া দিয়া আবার অন্তর্হিত হইয়াছে এবং রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে আবার পূর্বের আবরণ নামিয়া আসিয়াছে।

 দক্ষিণেশ্বরের পরমহংসদেবের একটি উক্তি এই সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য, তিনি বলিয়াছেন যে, এমন গাছও আছে, যার আগে ফল পরে ফুল। অর্থাৎ, আগে সিদ্ধি পরে সাধনা, এমন দৃষ্টান্ত বিরল নহে, ইহাই তিনি বলিয়াছেন। পরমহংসদেবের নিজের জীবনই সেই দৃষ্টান্ত।

 বয়স তখন তাঁহার দশ কি এগারো, একদিন পাশের আনুড় গ্রামে বিশালাক্ষী দেবীকে দেখিতে চলিয়াছেন, মাঠের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছেন, এমন সময়ে দেখিতে পান যে আকাশে বক উড়িয়া চলিয়াছে। দেখিয়াই তিনি সংজ্ঞা হারাইয়া মাটিতে পড়িয়া যান, তখন তাঁহাকে ধরাধরি করিয়া বাড়ীতে আনা হয়। পরবর্তীকালে নিজেই তিনি এই ঘটনার কথায় বলিয়াছেন, “দশ-এগারো বছরের সময় দেশে বিশালাক্ষী দেখতে গিয়ে মাঠে অবস্থা হয়। কি দেখলাম!—একেবারে বাহ্যশূন্য।”

 অকস্মাৎ চৈতন্যের মহাকাশটি ভিতরে উদ্ঘাটিত হইয়া গিয়াছিল এবং সেই আকাশেই তিনি ধাবমান বলাকা শ্রেণীকে দেখিতে পাইয়াছিলেন। এখানে উল্লেখ থাকে যে, উপনিষদেও ব্রহ্মের এক নাম বলা হইয়াছে—আকাশ। পরমহংসদেব অন্যত্র বলিয়াছেন যে, সেদিন তিনি ব্রহ্মজ্যোতিই দর্শন করিয়াছিলেন। ইহাই পরমহংস—