পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(৩)

 রবীন্দ্রনাথের আঠারো-ঊনিশ বৎসর বয়সের প্রথম উপলব্ধির মধ্যে দুইটি বিশেষ-দর্শন লক্ষিত হয়—ব্রহ্মের জ্যোতিরূপ এবং জগতের আনন্দরূপ। কিন্তু এই উপলব্ধিটি যেমন অকস্মাৎ আসিয়াছিল, কিছু কাল পরে তেমনি অকস্মাৎ অন্তর্হিত হইয়াছে; দৃষ্টির উপর হইতে যে পর্দা সরিয়া গিয়াছিল, তাহা আবার যথাস্থানে নামিয়া আসিয়াছে। উপলব্ধিটি বিবরণের উপসংহার রবীন্দ্রনাথ এইভাবে করিয়াছেন,—

 “জগতের আনন্দরূপের উপর তখনো যবনিকা পড়িয়া গেল না। .... . কিছু কাল আমার এইরূপ আত্মহারা আনন্দের অবস্থা ছিল। পরিচয় পাইয়াছি, কিন্তু আর দেখা পাই না। রত্ন দেখিতেছিলাম, হঠাৎ তাহা বন্ধ হইল এখন কৌটা দেখিতেছি। কিন্তু কৌটার উপরকার কারুকার্য যতই থাক, তাহাকে আর শূন্য কৌটামাত্র বলিয়া ভ্রম করিবার আশঙ্কা রহিল না।”

 আত্মার জ্যোতিরূপ এবং জগতের আনন্দরূপ যিনি দেখিয়াছেন, তাঁহার দৃষ্টিতে আবার আবরণ নামে কেমন করিয়া?

 প্রশ্নটির উত্তরে প্রথমে মনে রাখিতে হইবে যে, ব্রহ্মদর্শন আর ব্রাহ্মীস্থিতি এক বস্তু নয়। ব্রহ্মজ্যোতিদর্শন হইলেই ব্রহ্মজ্যোতিতে প্রতিষ্ঠা হয় না, আত্মসাক্ষাৎকার হইলেই স্ব-স্বরূপে স্থিতি লাভ হয় না। ব্রহ্মদর্শন বা আত্মদর্শনের অর্থ হইল জ্ঞানলাভ। যোগসূত্রে মহর্ষি পতঞ্জলি এবং যোগবাশিষ্ঠ্যে মহর্ষি বশিষ্ঠ জ্ঞানের সপ্তভূমির কথা বলিয়াছেন। এই জ্ঞানভূমি একটির পর একটি ক্রমে ক্রমে জয়