পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

স্পর্শনই জীবকে মহৎ ভয় অর্থাৎ সংসারবন্ধন হইতে ত্রাণ করিয়া থাকে॥

 এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ এত জোর দিয়া বলিতে পারিয়াছেন যে, “ভ্রমের আশঙ্কা হইতে” তিনি চিরকালের জন্য ত্রাণ পাইয়াছেন।

 পরমহংসদেব আগে ফল পরে ফুল, অর্থাৎ আগে প্রাপ্তি পরে সাধনার কথা বলিয়াছেন। দেবর্ষি নারদের আখ্যানেও আগে ভগবানকে দেখা পরে তাঁহাকে খোঁজার কথা আছে। ব্রহ্মের কোনরূপ প্রকাশ যাহাদের জীবনে প্রথমে হয়, তাঁহাদের জীবনে সাধনা স্বভাব-নিয়মে আপনা হইতেই হইয়া থাকে। যাঁহাকে পলকের জন্য দেখা পাওয়া গিয়াছে, তাঁহাকে পাইবার জন্য তখন একটা তীব্র ব্যাকুলতা সর্বক্ষণ সাধকের অন্তরে নদীধারার মত বহমান থাকে। এই তীব্র ব্যকুলতাই একটির পর একটি সাধনার স্তর বা ঘাট পার করিয়া সাধককে আগাইয়া লইয়া চলে। যিনি গুহাহিত, যিনি অন্তর্যামী, তিনি হৃদয়ের আবরণ সরাইয়া দেখা দিয়াছিলেন, সেই অন্তরবাসী ‘অন্তর্যামী অমৃত আত্মা’-কে তখন হৃদয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত অহর্নিশি চলিতে থাকে এবং ইহারই নাম সাধনা।

 এই সাধনা রবীন্দ্রনাথকেও করিতে হইয়াছিল। আসলে রবীন্দ্রনাথকে দিয়া এ সাধনা করাইয়া লওয়া হইয়াছিল, পরবর্তী কালের ঘটনা এবং উপলব্ধিসমূহ হইতে তাহার প্রমাণ আমরা যথাস্থানে দেখিতে পাইব।

 পূর্বেই মহর্ষি পতঞ্জলির যোগসূত্র এবং ব্যাসভাষ্যের নির্দিষ্ট লক্ষণ অনুসরণ করিয়া আমরা দেখিতে পাইয়াছি যে, রবীন্দ্রনাথ আত্মসাক্ষাৎকারের বীজটি লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এই আত্মসাক্ষাৎকারের বীজটি ভিতরে ছিল বলিয়াই রবীন্দ্রনাথকে কোন স্বতন্ত্র বা বিশেষ সাধনা করিতে হয় নাই; সেই বীজটির ক্রমঃপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মনের যে অবস্থা বা পরিবর্তন ঘটিতে থাকে, তাহাই ভাষান্তরে একটির পর একটি সাধন অবস্থার স্তর অতিক্রম করা, অথবা একটির পর একটি জ্ঞানভূমি বা সাধনভূমি লব্ধ হওয়া।

 নিজের উপলব্ধির প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী জীবনে উপনিষদের একটি মন্ত্র বহুবার উল্লেখ করিয়াছেন। মন্ত্রটি কঠ ও মুণ্ডক উভয় উপনিষদে দৃষ্ট হইয়া থাকে, তাহা এই,—

 “নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন। যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্যস্তস্যৈষ আত্মা বিবৃণুত্বে তনুং স্বাম”—এই ব্রহ্মকে বহু সাধ্যায় অর্থাৎ বেদপাঠ সহায়ে, অথবা মেধা বা ধারণাশক্তি সহায়ে, কিম্বা বহু শাস্ত্র শ্রবণের দ্বারাও