বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
১৭

জানা যায় না। যাঁহাকে ইনি বরণ করেন অর্থাৎ কৃপা করেন, তাঁহারই নিকট এই ব্রহন স্বীয় রূপ প্রকাশ করেন॥

 ব্রহ্মই রবীন্দ্রনাথকে বরণ করিয়াছিলেন, ব্রহ্মের সেই প্রকাশই পরে ব্রহ্ম আকর্ষণে পরিণত হয় এবং এই আকর্ষণই রবীন্দ্রনাথকে যে পথে আগাইয়া লইয়াছিল, সেই পথের নাম বা বিবরণই সাধনা। এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ নিজে এই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন—

 “সাধকেরা আপনারাই বলিয়াছেন তাঁহাকে পাইবার ‘পথ ন মেধয়া ন বহনা এভেন’। অর্থাৎ, এটা কোনমতেই পঠন-পাঠনের ব্যাপার নহে। কিন্তু কেমন করিয়া সাধকেরা এই পূর্ণতার উপলব্ধিতে উপনীত হইয়াছেন, তাহা আজ পর্যন্ত কোন মহাপুরুষ আমাদিগকে বলিয়া দিতে পারেন নাই। তাঁহারা কেবল বলেন, বেদাহমেতম্, আমি জানিয়াছি, আমি পাইয়াছি। কেমন করিয়া যে তাঁহারা ইঁহাকে জানেন, সে অভিজ্ঞতা এতই অন্তরতম যে, তাহা তাঁহাদের নিজেদেরই গোচর নহে।”

 রবীন্দ্রনাথকেও যে সাধনা করিতে হইয়াছিল, তাহা যথাস্থানেই আলোচ্য। আপাতত দৃষ্টান্ত বা প্রমাণ হিসাবে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাইতেছে, রাণী চন্দ এবং মৈত্রেয়ী দেবী উভয়ের গ্রন্থেই এই ঘটনাটির উল্লেখ আছে।

 একদিন রাত্রে রবীন্দ্রনাথকে হঠাৎ বিছায় কামড় দেয়। ভুক্তভোগীমাত্রেই জানেন যে, বৃশ্চিক দংশনে কিরূপ জ্বালা হইয়া থাকে। অসহ্য যন্ত্রনায় রবীন্দ্রনাথও অস্থির হইয়া উঠেন, কিন্তু গৃহের সকলেই নিদ্রিত: তাঁহার যন্ত্রণার জন্য আর সকলের ঘুম ভাঙ্গিবে, এই চিন্তাও রবীন্দ্রনাথের ভদ্রমনের পক্ষে অসহ্য, ফলে ঔষধের কোন ব্যবস্থা করা সম্ভবপর হয় নাই।

 এই অবস্থায় হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের মনে প্রশ্ন জাগে— আচ্ছা বিছার কামড়ের এই ব্যথা কে ভোগ করিতেছে? মনেই উত্তর আসিল-দেহধারী রবীন্দ্রনাথ নামক যে-ব্যক্তি, তাঁহারই এই ব্যথা, আসল আমির তো কোন ব্যথা থাকিতে পারে না। এই চিন্তা বা বোধের ফল কি হইল, তাহা রবীন্দ্রনাথের স্বমুখেই শোনা যাক, তিনি বলিয়াছেন,—

 “যে দেহধারী কষ্ট পাচ্ছে সে আমি নয়—হঠাৎ মনে হোল যেন কী রকম একটা যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল সে মুহূর্তে যত চেতনা।”

 সামান্য বিশ্লেষণেই বুঝা যায় যে, দেহ হইতে মনকে তথা চৈতন্যকে রবীন্দ্রনাথ সরাইয়া লইয়াছিলেন, তাই অসহ্য জ্বালা-যন্ত্রণার কোন বোধই আর তাঁহার ছিল না। ইহা কেমন করিয়া সম্ভব হয়? উত্তরে তিনি বলিয়াছেন —