পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
২১

বহন করিতেছে। কাজেই ব্রহ্মবাদী ঋষিদের নিকট সূর্য ব্রহ্মের প্রতীকরূপে উপাস্য ও পূজিত। রবীন্দ্রনাথও গোত্রে ও ধর্মে সেই ঋষি; কাজেই কোন মূর্তি বিগ্রহ মন্ত্র ইত্যাদির পরিবর্তে সূর্যই যে ব্রহ্মের দূতরূপে তাঁহার জীবনে অবির্ভূত হইবে, ইহা আদৌ আকস্মিক নহে, ইহাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত।

 রবীন্দ্রনাথ বহুবার বলিয়াছেন যে, প্রত্যহ প্রভাতসূর্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁহার করা চাই-ই এবং যেদিন সূর্যের দেখা না পান, সেদিন দিনটাই তাঁহার ব্যর্থ ও নষ্ট হইয়া গিয়াছে বলিয়া তিনি মনে করিতেন। এই কারণেই কখনো কোথাও গেলে আবাসস্থানে পূর্বদিকের ঘরই তিনি বাছিয়া নিতেন, যেন প্রভাতে উঠিয়াই প্রিয়তমের জ্যোতির্ময়ী আকাশদূতীকে তিনি সময়মত অভ্যর্থনা করিতে পারেন। ইহাই ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রাত্যহিক এবং একমাত্র উপাসনা। পৃথিবীর সকল কবি বা সাধক একত্র মিলিয়াও রবীন্দ্রনাথের ন্যায় এত সূর্যবন্দনা করেন নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না।

 রবীন্দ্রনাথের জীবনে সূর্য কি স্থান গ্রহণ করিয়াছে, তাহার একটু বিবরণ বা দৃষ্টান্ত দেওয়া অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। তাঁহার সূর্যোপসনার আরম্ভ তিনি এইভাবে করিয়াছেন—

প্রতিদিন যে পৃথিবী
প্রথম সৃষ্টির অক্লান্ত নির্মল দেববেশে দেয় দেখা,
আমি তার উম্মীলিত আলোকে অনুসরণ ক’রে
অন্বেষণ করি আপন অন্তরলোক॥

 ইহার পরেই রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে বৈদিক ঋষির মত প্রার্থনা-মন্ত্র ধ্বনিত হইয়াছে—

আমিও প্রতিদিন উদয়দিগ্বলয় থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মিচ্ছটায়
প্রসারিত ক’রে দিই আমার জাগরণ,
বলি,—হে পূষণ,
তোমার হিরণ্ময় পাত্রে সত্যের মুখে আচ্ছন্ন,
উন্মুক্ত কর সেই আবরণ।
বলি,—হে সবিতা,
সরিয়ে দাও আমার এই দেহ, এই আচ্ছাদন,—
তোমার তেজোময় অঙ্গের সূক্ষ্ম অগ্নিকণায়
রচিত যে আমার দেহের অণুপরমাণু,