পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

তারো অলক্ষ্য অন্তরে আছে তোমার কল্যাণতম রূপ,
তাই প্রকাশিত হোক আমার নিরাবিল দৃষ্টিতে
আমার অন্তরতম সত্য॥

 অন্য একটি সূর্য স্তবে তিনি বলিয়াছেন—

“হে সবিতা তোমার কল্যাণতম রূপ
করো অপাবৃত,
সেই দিব্য আবির্ভাবে
হেরি আমি আপন আত্মারে
মৃত্যুর অতীত!”

 প্রথম উপলব্ধিটির প্রথম প্রভাবের ফলে রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগত জীবনে সূর্যপূজারী বা সূর্যোপাসক। এই প্রভাবটির ফলেই তাঁহার নিজস্ব সাধনার ধারা বা পথটি উন্মুক্ত হইয়াছে—সে সাধনা হইল সূর্য-সাধনা।

 অতঃপর রবীন্দ্রনাথের এই প্রথম উপলব্ধিটির দ্বিতীয় প্রভাবটির সংক্ষেপে উল্লেখ করা যাইতেছে। প্রথম প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনে, সেখানে তিনি সূর্য পূজারী; দ্বিতীয় প্রভাব তাঁহার সাহিত্য-জীবনে, সেখানে তিনি আনন্দের উপাসক।

 প্রথম উপলব্ধিতে রবীন্দ্রনাথের নিকট জগতের আনন্দরূপ উদ্ঘাটিত হইয়াছিল, ইহার ফলে তাঁহার সাহিত্য-সাধনায় কখনো নিছক রূপসৃষ্টিকে রসসৃষ্টিকে তিনি লক্ষ্য বা আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করিতে পারেন নাই। তাঁহার সাহিত্য-সাধনায় যে রূপের সাধনা দেখা যায়, তাহা আনন্দ-সাধনা, আর এই ‘আনন্দই ব্রহ্মের রূপ’ উপনিষদ বলেন। তাই তিনি সাহিত্যে যে রসসৃষ্টির সাধনা করিয়াছেন, তাহা আনন্দময়ের ‘রসো বৈ সঃ’-এর সাধনা।

 এই প্রথম উপলব্ধিটি সম্বন্ধে তিনি নিজেই তাই এই প্রসঙ্গে বলিয়াছেন, “এই আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা, যাকে আধ্যাত্মিক নাম দেওয়া যেতে পারে।......তখন স্পষ্ট দেখেছি, জগতের তুচ্ছতার আবরণ খসে গিয়ে সত্য অপরূপ সৌন্দর্যে দেখা দিয়েছে। সমস্ত বিশ্বের আনন্দরূপকে একদিন বাল্যাবস্থায় সুস্পষ্ট দেখেছিলুম, সেই জন্যেই ‘আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি’ উপনিষদের এই বাণী আমার মুখে বার বার ধ্বনিত হয়েছে। সেদিন দেখেছিলুম, বিশ্ব স্থূল নয়, বিশ্বে এমন কোন বস্তু নেই, যার মধ্যে রসস্পর্শ নেই। যা প্রত্যক্ষ দেখেছি তা নিয়ে তর্ক কেন? স্থূল আবরণের মৃত্যু আছে, অন্তরতম আনন্দময় যে সত্তা, তার মৃত্যু নেই।”

 এই প্রথম অভিজ্ঞতাটিই তাঁহার কবি-জীবন বা সাহিত্য-সাধনায় নির্ঝরের