বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৩৫

 এখানে উল্লেখ থাকে যে, আত্মাতে যাঁহার রতি, আত্মাতে যাঁহার ক্রীড়া, আত্মাতেই যাঁহার আনন্দ, সেই পুরুষকেই উপনিষদে ‘ব্রহ্মবিদ্ বরিষ্ঠ” বলা হইয়াছে ।

 দেখা গেল যে ভূমা বলিতে উপনিষদ ব্রহ্মকেই বুঝাইয়াছেন এবং ভূমাতত্ত্ব বুঝাইতে ব্রহ্মতত্ত্বই বুঝাইয়াছেন। কাজেই ভূমাকে দর্শন মানেই ব্রহ্মদর্শন, এই বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন যে, তিনি ভূমারে দেখিয়াছেন। ইহার সোজা অর্থ—তাঁহার ব্রহ্মদর্শন হইয়াছে, এই স্পষ্ট ঘোষণাই রবীন্দ্রনাথ করিয়াছেন।

 নিজের উপলব্ধি এবং তাহা স্বমুখে ঘোষণা, ইহাকে কখনো রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞতার পরিচয়রূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে না, যতক্ষণ না শাস্ত্রের সমর্থন পাওয়া যায়। কাজেই এখন আমাদের শাস্ত্রের একটু আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইবে।

 শাস্ত্রের সমর্থন সংগ্রহে প্রথমেই একটি যে সমস্যা দেখা দিবে, তাহার উল্লেখ দরকার। সমস্যাটি এই—কেহ যদি নিজ মুখে বলে যে, তাহার জিভ নাই, সে কথা বিশ্বাস করা চলে কি?

 ব্রহ্মকে দেখিয়াছি, ভূমাকে দেখিয়াছি ইত্যাদি উক্তিও তদ্রূপ স্বতঃসিদ্ধ অবিশ্বাস্য। কারণ উপনিষদ অসংখ্যবার বলিয়াছেন যে, ব্রহ্মকে দেখা যায় না; ব্রহ্ম অনির্দেশ্য নির্দেশের অতীত, অলক্ষ্য লক্ষণের অতীত, অবাচ্য বচনের অতীত। উপনিষদ আরও বলেন যে, ব্রহ্ম অজ্ঞেয়, ব্রহ্ম জ্ঞানাতীত—তিনি অবাঙমনস গোচর।

 ব্রহ্মকে দেখা যায় না, জানা যায় না, এই বিষয়ে অসংখ্য শ্রুতি, অর্থাৎ উপনিষদের উপদেশ রহিয়াছে। কয়েকটি শ্রুতি উদ্ধৃত করা যাইতেছে।

 কঠোপনিষদ বলেন, “ন সংদৃশে তিষ্ঠতি রূপমস্য ন চক্ষুষা পশ্যতি কশ্চিদেনম্”—তাঁহার রূপ দৃষ্টিগোচর নহে, চক্ষুর দ্বারা কেহ তাঁহাকে দেখিতে পায় না।

 “নৈব বাচা ন মনসা প্রাপ্তং শক্যো ন চক্ষুষা” (কঠ)—তিনি বাক্য মন চক্ষু, কিছুরই প্রাপ্য নহেন।।

 মুণ্ডকোপনিষদ বলেন, “ন চক্ষুষা গৃহ্যতে.....”— তিনি চক্ষুর গ্রাহ্য নহেন, ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য নহেন, ইত্যাদি ॥

 তৈত্তিরীয়োপনিষদ বলেন, “যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ”—বাক্য ও মন যাঁহার নাগাল না পাইয়া ফিরিয়া আসে ।