পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

 কোনোপনিষদ বলেন,“ন তত্র চক্ষুর্গচ্ছতি ন বাকগচ্ছতি ন মনো ন বিস্মো ন বিজানীমো যথৈতদনুশিষ্যাৎ”— সেখানে চক্ষু যাইতে পারে না, বাক্য যাইতে পারে না, মন যাইতে পারে না, বুদ্ধি যাইতে পারে না; তাঁহাকে আমরা জানি না, কিরূপে তাঁহার উপদেশ দেওয়া যাইবে।

 উপনিষদের আদি উপদেষ্টা মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য পূর্বোক্ত সমস্ত উক্তিকে বা তত্ত্বকে একটি কথায় পত্নী মৈত্রেয়ীকে উপদেশ করিয়াছেন।

 “বিজ্ঞাতারমরে কেন বিজানীয়াৎ” — হে প্রিয়ে, যিনি সর্বজ্ঞানের একমাত্র কর্তা, সেই বিজ্ঞাতাকে আবার কিসের দ্বারা জানিবে।

 অধিক শ্রুতির আর উদ্ধৃতির আবশ্যক করে না, যে কয়টি শ্রুতি উদ্ধৃত হইল, তাহা হইতেই জানা যাইতেছে যে, সর্বোপনিষদেরই উপদেশ—ব্রহ্ম ‘ন চক্ষুষা গৃহ্যতে’, তাঁহার ‘রূপম ন চক্ষুষা পশ্যতি’। এক কথায়-ব্রহ্মকে চোখে দেখা যায় না, জানা যায় না।

 অথচ রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—‘ভূমারে দেখেছি’। এই সমস্যার মীমাংসা কি?

 যাঁহাকে দেখা যায় না, সেই ব্রহ্মকে তিনি দেখিয়াছেন, তাঁহার এই উক্তির মধ্যে, উপলব্ধির মধ্যে নহে, যে একটি স্বতঃবিরোধ রহিয়াছে, তাহা রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি এড়ায় নাই। তাই তৈত্তিরীয়োপনিষদের নিম্নোক্ত মন্ত্রটি উদ্ধৃত করিয়া তিনি বলিয়াছেন—

যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসাসহা।
 আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান। ন বিভেতি কদাচন।।

 “—এমন অদ্ভুত বিরদ্ধ কথা একই শ্লোকের দুই চরণের মধ্যে তো এমন সুস্পষ্ট করে কোথাও শোনা যায়নি। শুধু বাক্য ফেরে না, মনও তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসে, একেবারে সাফ জবাব। অথচ সেই ব্রহ্মের আনন্দকে যিনি জেনেছেন, তিনি আর কিছু থেকে ভয় পান না। তবেই তো যাঁকে একেবারে জানা যায় না, তাঁকে এমনি জানা যায় যে, আর কিছু থেকেই ভয় থাকে না। সেই জানাটা কিসের জানা?”

 যাঁহাকে জানা যায় না, সেই ব্রহ্মকে রবীন্দ্রনাথ কি ভাবে জানিয়েছেন? তিনি নিজে বলিয়াছেন—“ভূমারে দেখেছি ধ্যান চোখে।”

 ভূমাকে ব্রহ্মকে সত্যই ধ্যানচোখে দেখা যায় কিনা, তাহাই অতঃপর অনুসন্ধান করা যাইতেছে।

 ভূমাতত্ত্ব যে ছন্দ্যোগ্য উপনিষদে উপদিষ্ট হইয়াছে, সেই উপনিষদেই দেখা