পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

সন্দেহের কোন অবকাশ নাই।

 এখানে হয়তো অনেকের মনে হইতে পারে যে, একই ব্রহ্ম অণু হইতে অণু এবং মহৎ হইতে মহৎ কি প্রকারে হন। কেমন করিয়া হন, তাহা তিনিই জানেন। আমরা শুধু জানি যে, উপনিষদের মতে ইহাই ব্রহ্মের পরিচয় এবং সে-পরিচয় আমাদের যুক্তি-তর্কের উপর নির্ভর করে না।

 ত’হা ছাড়া, উত্থাপিত প্রশ্নটি হইল আসলে ব্রহ্মজিজ্ঞাসা, আর ব্রহ্মবিচার আমাদের আলোচ্য প্রসঙ্গ নহে। উপনিষদের ঋষিগণ একই ব্রহ্ম সম্বন্ধে একই সঙ্গে বিরুদ্ধ কথা বলিয়া গিয়াছেন এবং তাহাই ব্রহ্ম সম্বন্ধে প্রামাণ্য বিবরণ বলিয়া আমাদিগকে মানিয়া লইতে হইবে।

 উদ্ধৃত মন্ত্রটির ন্যায় অন্যান্য উপনিষদেও ব্রহ্ম সম্বন্ধে অনুরূপ উক্তি বা উপদেশ পরিদৃষ্ট হইয়া থাকে।

 মণ্ডকোপনিষদ বলেন, এষোহণুরাত্মা।

 শ্বেতাশ্বেতরোপনিষদেই বলেন, আরাগ্রমাত্রোহ্যপরোঽপি দৃষ্টঃ। এখানে ব্রহ্মকে ‘আরাগ্র-মাত্রঃ’ গরু-চরাইবার পাচনির অগ্রভাগে সূঁচীমুখের ন্যায় সূক্ষ্ম-পরিমাণ বলা হইয়াছে।

 এই শ্বেতাশ্বতরোপনিষদেই অন্যত্র একই শ্লোক ব্রহ্মকে “সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম্ং বিশ্বস্য স্রষ্টারম্” সূক্ষ্মতিসূক্ষ্মা বিশ্বস্রষ্টা এবং “বিশ্বস্যৈকং পরিবেষ্টিতারং” বিশ্বের অন্তর-বাহিরে অদ্বিতীয় পরিব্যাপক বা পরিব্যাপ্তা বলা হইয়াছে।

 ছান্দোগ্য উপনিষদে শাণ্ডিলা-বিদ্যা অধিকরণে “এষো ম আত্মান্তর্হৃদয়ে” এই ব্রহ্মই আমার আত্মা এবং এই হৃদয়ের অভ্যন্তরে, ইহা বলিয়া তাঁহাকে “অণীয়ান ব্রীহেং বা যবাৎ বা......ব্রীহি যব সর্যপ ইত্যাদি অপেক্ষাও অণু”-রূপে বর্ণনা করা হইয়াছে ।

 তৎপরেই পূর্ববৎ “এই ব্রহ্মই আমার আত্মা এবং এই হৃদয়ের অভ্যন্তরে” বলিয়া তাঁহার বর্ণনা দিয়াছেন—“জ্যায়ান পৃথিব্যা......ইনি পৃথিবী, অন্তরিক্ষ এই সমুদয় লোক অপেক্ষাও মহান ॥”

 হৃদয়ে অবস্থিত একই ব্রহ্মকে একই সময়ে ‘অণীয়ান’ এবং ‘জ্যায়ান’ এই দুই বিরদ্ধ বিশেষণে উপনিষদ বিশেষিত করিয়াছেন দেখা যায়। কাজেই ব্রহ্ম সম্বন্ধে ‘অণোরণীয়ান মহতো মহীয়ান’ এই পরিচয় মানিয়া লওয়া ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নাই।

 প্রসঙ্গত সংক্ষেপে শুধু এইটুকু বলিয়া রাখা যাইতে পারে যে, ব্রহ্ম সমস্ত