পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৪৭

বিরদ্ধে ধর্মের সমন্বয় এবং যাহা কিছু বিরোধ পরিদৃষ্ট হইয়া থাকে তাহা আমাদের বুদ্ধির ক্ষেত্রে মাত্র, বিরুদ্ধ ধর্ম বা বিরুদ্ধ বিশেষণ ব্রহ্মের কোন ইতরবিশেষ ঘটায় না। এককথায়, তিনি স্বয়ং সমস্ত কিছুকেই স্পর্শ করিয়া আছেন, কিন্তু তাঁহাকে কোন কিছুই স্পর্শ করিতে পারে না।

 আলোচ্য প্রসঙ্গে আসা যাইতেছে—‘অণু হইতে অণীয়ান মহৎ হইতে মহীয়ান’ বলিয়া রবীন্দ্রনাথ যে ব্রহ্মকেই বুঝাইয়াছেন, এ বিষয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ নাই এবং তাঁহারই সন্ধান তিনি পাইয়াছেন, ইহাই রবীন্দ্রনাথ জানাইতে চাহিয়াছেন, এই বিষয়েও সন্দেহের কোন অবকাশ নাই।

 কিন্তু এইরূপ সুস্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও আলোচ্য প্রসঙ্গে স্বয়ং বক্তার মুখের কথার উপর আমরা পূর্বে নির্ভর না করিয়া ব্রহ্মদর্শনের প্রমাণই চাহিয়াছি। এক্ষেত্রেও তাই জিজ্ঞাসা করিতে হইতেছে, রবীন্দ্রনাথ যে ‘অণোরণীয়ান মহতো মহীয়ান’-কেই দেখিয়াছেন, তাহার কিছু প্রমাণ তিনি দিয়াছেন কি?

 সেই প্রমাণ রবীন্দ্রনাথ দিয়াছেন তাঁহার এই উক্তিতে - “ইন্দ্রিয়ের পারে তাঁর পেয়েছি সন্ধান।”

 ইহা প্রমাণ কিনা, তাহাই এখন আমাদের বিচার্য। কোথায় তিনি ব্রহ্মকে দেখিয়াছেন, ইহা তিনি স্পষ্টভাবেই ঘোষণা করিয়াছেন। এই প্রমাণ-পথটি অনুসরণ করিলে ব্রহ্মেরই সন্ধান পাওয়া যায় কিনা, এইটুকু শুধু এখন আমাদিগকে দেখিতে হইবে। অর্থাৎ, ‘ইন্দ্রিয়ের পারে’ বলিতে গন্তব্য ব্রহ্মে গিয়াই শেষ হয় কিনা, ইহাই আমাদের বিচার্য।

 বৈদিক ঋষি বলিয়াছেন, ‘তমসার পারে’ তিনি ব্রহ্মের সন্ধান পাইয়াছেন, আর রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন, ‘ইন্দ্রিয়ের পারে তাঁর পেয়েছি সন্ধান’।

 এখন প্রশ্ন, ‘তমসার পার’ এবং ‘ইন্দ্রিয়ের পারে’ কি একই ব্যাপার?

 বাহ্যত তাহা মনে হয় না, কারণ তমসা এবং ইন্দ্রিয় কোনক্রমেই এক অর্থ বহন করে না। কাজেই ‘তমসার পার’ এবং ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ একই ব্যাপার, ইহা প্রমাণ করিবার জন্য গলদঘর্ম হইবার দরকার নাই। আমরা আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি ও যুক্তির পথ প্রথমে একটু অনুসরণ করিতে পারি এবং সে-পথে ‘ইন্দ্রিয়ের পার’-এর নাগাল অর্থাৎ অর্থ পাওয়া দুর্লভ নাও হইতে পারে।

 আমাদের ইন্দ্রিয়ের একটামাত্র দিকই আমরা দেখিতে পাই, তাহা হইল বিষয়ের দিক। ইন্দ্রিয়ের এই দিকে গিয়া তো কোন পারই পাওয়া যায় না। চক্ষু চিরকালই রূপ দেখিবে, অনন্তকাল চক্ষু মেলিয়া চাহিয়া দেখিলেও চক্ষু দিয়া