বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

 উপনিষদ যাহাকে ‘আবৃত-চক্ষু’ বলিয়াছেন, তাহাই রবীন্দ্রনাথের কথিত ‘ইন্দ্রিয়ের পারে’ যাইবার পথ।

 প্রশ্নোপনিষদেও দেখা যায় যে, মহর্ষি পিপ্পলাদ শিষ্য ভরদ্বাজ-পুত্র সুকেশার আত্মজিজ্ঞাসার উত্তরে এই একই উপদেশ দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন—

অরা ইব রথনাভৌ কলা যস্মিন প্রতিষ্ঠিতাঃ।
তং বেদ্যং পুরুষং বেদ যথা মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথা ইতি॥

 —রথচক্রের নাভিরন্ধ্রে সংস্থিত অর (শলাকা)-সমূহের ন্যায় উক্ত কলাসমূহ (পঞ্চপ্রাণ, পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন = ষোড়শ কলা) যে পুরুষে আশ্রিত রহিয়াছে, সেই বেদিতব্য পুরুষকে অবশ্যই জানিবে—যাহার ফলে মৃত্যু তোমাদিগকে ব্যথিত করিতে না পারে॥

 ইহার পরেই মহর্ষি পিপ্পলাদ বলিয়াছেন, “এতাবদেবাহিমেতং পরং ব্রহ্মবেদ। নাতঃ পরমস্তীতি”—আমি এই পরব্রহ্মকে এই পর্যন্তই জানি। ইহার অতিরিক্ত আর (ব্রহ্মতত্ত্ব) নাই॥

 এখানে এই কয়টি কথা বলা হইয়াছে, যথা—রথের চাকার শলাকাসমূহ যেমন চাকার নাভিরন্ধ্রে সংযুক্ত, ইন্দ্রিয়সমূহও তেমনি পুরুষে প্রতিষ্ঠিত বা আশ্রিত। সেই পুরুষই একমাত্র বেদিতব্য। তাঁহাকে জানিলে মৃত্যু আর স্পর্শ করে না; তিনিই পরব্রহ্ম, তাহার পরে বা অতিরিক্ত আর কিছু নাই॥

 রথের চাকার শলাকার এক মুখ পরিধির দিকে, ইন্দ্রিয়েরও এক মুখ বিষয় পরিধির দিকে। রথের চাকার শলাকার অন্য মুখ চাকার কেন্দ্রে নাভিরন্ধ্রে সংযুক্ত, ইন্দ্রিয়েরও অপর মুখ ইন্দ্রিয়ের কর্তা– পুরুষের সঙ্গে যুক্ত। ‘ইন্দ্রিয়ের পারে’ বলিতে রবীন্দ্রনাথও এই কেন্দ্রের দিকেই ইঙ্গিত করিয়াছেন। এই কেন্দ্রকেই মহর্ষি পিপ্পলাদ বলিয়াছেন—পরব্রহ্ম।

 রবীন্দ্রনাথও তেমনি বলিয়াছেন— “ইন্দ্রিয়ের পারে” অণোরণীয়ান মহতো মহীয়ানকে তিনি দেখিয়াছেন। আর ‘অণোরণীয়ান মহতো মহীয়ান্’ যে ব্রহ্ম, তাহা পূর্বেই আমরা দেখিয়াছি।—এখন আমরাও নিশ্চয় ঘোষণা করিতে পারি যে, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ, রবীন্দ্রনাথ ঋষি।

 ‘ইন্দ্রিয়ের পারে’ যাইবার জন্য উপনিষদ ‘আবৃত চক্ষু’ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সমূহকে বিষয় হইতে প্রত্যাহারপূর্বক অন্তর-কেন্দ্রে লগ্ন করিবার উপদেশ দিয়াছেন। ইন্দ্রিয়ের এই ‘প্রত্যাহারই’ পরে ধ্যানে পরিণত হয় এবং এই ধ্যানী পুরুষকেই