পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রদর্শন ও বাণীরই ব্যাখ্যা বা ভাষ্য করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে আরও অনেকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রহিয়াছে, কিন্তু কোন গ্রন্থেই বিশেষভাবে এই প্রশ্নটিকে গ্রহণ করিয়া ইহার মীমাংসার চেষ্টা করা হয় নাই। রবীন্দ্র-জীবনীও কয়েকখানা রহিয়াছে, তাহাতেও পূর্বোক্ত প্রশ্নের কোন আলোচনা পরিদৃষ্ট হয় না।

 বলা বাহুল্য, প্রশ্নটি বস্তুতই কঠিন প্রশ্ন। কেহ ব্রহ্মজ্ঞ কি না, এ-প্রমাণ কে দিবে? তাহা ছাড়া ব্রহ্মজ্ঞ প্রমাণ-নির্ভর, এমন কথাও বলা চলে না। ব্রহ্ম আছেন, ইহাই কেহ প্রমাণ করিতে পারেন না, কারণ ব্রহ্ম প্রমাণের অতীত। যাঁহাকে প্রমাণ করা যায় না, সেই ব্রহ্মকে কেহ জানিয়াছেন কি না, ইহাও প্রমাণ করা স্বভাবতই সমান সাধ্যাতীত। সাধকগণ বড়জোর এই কথাই বলিতে পারেন এবং বলিয়া থাকেন যে, ব্রহ্মকে জানা যায়, তাঁহাকে পাওয়া যায় এবং অনেকেই বলিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহারা তাঁহাকে জানিয়াছেন। তাঁহাদের আত্মোপলব্ধিই এই বিষয়ে একমাত্র প্রমাণ।

 কিন্তু সে-প্রমাণও একান্তভাবে তাঁহাদের ব্যক্তিগত উপলব্ধিতেই আবদ্ধ, তাঁহারাও সে-প্রমাণকে বাহিরে আনিতে পারেন নাই। কাজেই রবীন্দ্রনাথ ঋষি, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ, ইহা প্রমাণ করা কাহারও পক্ষে সম্ভবপর নহে। শুধু ব্রহ্মজ্ঞ ব্যক্তিই জানিতে পারেন যে, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ কি না। কিন্তু তাঁহাদের সে-জানাটাও প্রমাণ করা অসাধ্য ও অসম্ভব।

 রবীন্দ্রনাথ ঋষি, তিনি ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ, আমাদের এই বিশ্বাসের তবে কি কোন প্রমাণই পাওয়া সম্ভবপর নহে? সে-প্রমাণ পাওয়া একেবারে অসম্ভব ব্যাপার বলিয়া আমি মনে করি না। কেন, তাহাই প্রথমে সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা যাইতেছে।

 ব্রহ্মসূত্রে ব্রহ্মের পরিচয়ে বলা হইয়াছে—“জন্মাদ্যস্য যতঃ”, এই অচিন্ত্য বিচিত্র বিশ্বের সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় যাঁহা হইতে, তিনিই সেই জিজ্ঞাসিত ব্রহ্ম। কিন্তু ইহা ব্রহ্ম সম্বন্ধে প্রমাণ নহে, শুধু লক্ষণ বা চিহ্ন। তেমনি ব্রহ্মজ্ঞ সম্বন্ধেও লক্ষণ বা চিহ্ন থাকে, তাহাই ব্রহ্মজ্ঞ সম্বন্ধে প্রমাণ বলিয়া স্বীকৃত হইয়া আসিয়াছে। ব্রহ্মজ্ঞের সে লক্ষণ বা চিহ্ন কি? ব্রহ্মোপলব্ধি বা আত্মোপলব্ধিই সেই লক্ষণ। দক্ষিণেশ্বরের পরমহংসদেব বলিয়াছেন যে, যখন নিজের উপলব্ধি এবং শাস্ত্রের বাক্য মিলিয়া যায়, তখনই সাধক সিদ্ধ হইয়াছে জানিবে। উপলব্ধি এবং শাস্ত্রবাক্য এই সঙ্কেতনির্দেশ গ্রহণ করিয়া অগ্রসর হইলেই রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত সেই প্রমাণ পাওয়া যাইতে পারে।

 কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, নিজের ব্যক্তিগত উপলব্ধি সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ অতি