বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৬৩

জীবের সুষুপ্তি অবস্থা। এই সুষুপ্তিস্থানের আত্মাকেই মাণ্ডূক্য উপনিষদ বলিয়াছেন—“প্রাজ্ঞ” এবং ছান্দোগ্য বলিয়াছেন, “সম্প্রসাদ”।

 এই সুষুপ্তির আবরণ বা কারণ-শরীরমুক্ত অবস্থাই আত্মার ব্রহ্মরূপ। আর এই সুষুপ্তিকেই অথবা কারণ-শরীরকেই উপনিষদে বলা হইয়াছে—অবিদ্যা, মায়া, তমসা ইত্যাদি। এই কারণ-শরীর বা সুষুপ্তির তমসা ভেদ করিয়াই বৈদিক ঋষি বলিয়াছেন —

 "বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তং আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ—তমসার পারে সেই জ্যোতির্ময় মহান পুরুষকে আমি জানিয়াছি।”

 আর রবীন্দ্রনাথও তেমনি স্থূল-সূক্ষ্ম-কারণ দেহের এই আবরণ ভেদ করিয়া বলিয়াছেন—“দেখিয়াছি দেহের ভেদিয়া যবনিকা অনির্বাণ দীপ্তিময়ী শিখা॥” এই জ্যোতি-শিখাই তুরীয় আত্মা অর্থাৎ ব্রহ্ম।

 স্থূলদেহ হইতে সজ্ঞানে সূক্ষ্মদেহে আসিয়া অবস্থান করার নামই ধ্যান, ইহা হইল দেহের প্রথম আবরণ ভেদ বা অপসারণ, অথবা দেহের প্রথম যবনিকা উন্মোচন, বা উত্তোলন।

 তারপর সেই সূক্ষ্ম শরীর হইতে সজ্ঞানে চেতনাকে কারণ-শরীরে প্রত্যাহার বা নেওয়া। অর্থাৎ সুষুপ্তিতে সজ্ঞানে অবস্থিতির নামই সমাধি। ইহা হইল দেহের দ্বিতীয় আবরণ ভেদ করিয়া তৃতীয় শরীরে প্রবেশ ও অবস্থান।

 তৎপর সজ্ঞানে চেতনাকে কারণ-শরীর বা সুষুপ্তি হইতে নিষ্ক্রান্ত করিতে পারিলেই ব্রহ্মচৈতন্যে বা জ্যোতিতে জীবের প্রবেশ লাভ হইয়া থাকে। ইহাই হইল তৃতীয় এবং শেষ শরীর ভেদ বা উন্মোচন।

 এই তৃতীয় শরীর পার না হইলে ‘অনির্বাণ দীপ্তিময়ী শিখা’ কদাচ দৃষ্টিগোচর হয় না। বৈদিক ঋষির প্রসিদ্ধ প্রার্থনামন্ত্রে ইহাকেই বলা হইয়াছে—তমসা হইতে জ্যোতিতে গমন এবং মৃত্যু হইতে অমৃতে উত্তরণ।

 “দেখিয়াছি দেহের ভেদিয়া যবনিকা“-রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি ও উপলব্ধির আড়ালে কি সাধনা ও শক্তি নিহিত আছে, ইহা হইতেই অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ অনুমান করিয়া লইতে পারিবেন।