পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

 —“আবিঃ সন্নিহিতং গুহাচরং নাম (মুডক)—এই জগতে জীবগণের মধ্যে গুহাতে তিনি স্থিত।”

 —“সর্বভূতগুহাশয় (শ্বেতাশ্বতর)—তিনি সর্ব ভূতের মধ্যে গুহাশায়ী।”

 —“আত্মা গুহায়াং নিহিতোহস্য জন্তোঃ শ্বেত)—আত্মা প্রাণিবর্গের গুহায় স্থিত” ইত্যাদি॥

 উপনিষদের উদ্ধৃত উপদেশ হইতে এইটুকু জানা গেল যে, জীবদেহে একটি ‘গুহা’ আছে, যেখানে ব্রহ্ম নিহিত বা স্থিত আছেন। কোন্ স্থানকে গুহা বলা হইয়াছে, তাহার চাইতে কোন্ অর্থে উপনিষদ গুহা শব্দের প্রয়োগ করিয়াছেন, তাহাই সমধিক দ্রষ্টব্য। আচার্য শঙ্কর বলেন যে, ‘গুহা’ শব্দটি আবরণার্থক ‘গূহ’ ধাতু হইতে নিষ্পন্ন, অর্থাৎ জ্ঞানজ্ঞাতাজ্ঞেয় পদার্থ-ত্রয় যেখানে এবং যাহা দ্বারা আবৃত তাহাই গুহা।

 রবীন্দ্রনাথও দেহকে ব্রহ্মের যবনিকা বা আবরণরূপেই দেখিতে পাইয়াছেন, কাজেই এদিক দিয়াও রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধির পূর্ণ সমর্থনই উপনিষদে রহিয়াছে, দেখা গেল।

 উপনিষদে তিনটি শরীরের উপদেশ রহিয়াছে, দেখা যাইবে। ঐতরেয় উপনিবদ বলেন,— “তস্য এয় আবোসথাঃ এই দেহেই আত্মার তিনটি বাসস্থান॥”

 স্থূল, সূক্ষ্ম এবং কারণ—এই তিনটি দেহই তাঁহার পূর্বোক্ত আবাসত্রয়। বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য প্রভৃতি উপনিষদেও এই একই উপদেশ রহিয়াছে। এই তিনটি শরীরকে উপনিষদে তিনটি ‘অবস্থা’ বলিয়াও উপদেশ রহিয়াছে—জাগরণ, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি।

 মাণ্ডূক্য উপনিষদ বলেন,—সুষুপ্তির আবরণমুক্ত আত্মাই তুরীয় এবং ইহাই আত্মার ব্রহ্মরূপ। অর্থাৎ দেহের আবরণ অপসৃত হইলে এই আত্মাই লক্ষিত হন এবং এই আত্মাকেই উপনিষদ বলিয়াছেন—“অয়মাত্মা ব্রহ্ম॥”

 স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ তিনটি শরীরের উল্লেখ উপনিষদ করিয়াছেন। স্থূল শরীরকেই ‘ভোগায়তন’ বলা হয়। স্থূলদেহ হইতে চেতনা প্রত্যাহৃত হইলে জীব সূক্ষ্মদেহে প্রবিষ্ট ও কেন্দ্রস্থ হয়, তখন তাহার স্বপ্ন-অবস্থা। এই সূক্ষ্ম শরীরকে (পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়+পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়+পঞ্চপ্রাণ+মন ও বুদ্ধি) ‘লিঙ্গশরীর’ বলা হয়। সূক্ষ্ম শরীর স্থূল শরীরের অভ্যন্তরে অবস্থিত।

 আর সূক্ষ্ম শরীরের অভ্যন্তরে যে শরীর অবস্থিত, তাহাকেই বলা হয় কারণশরীর। সূক্ষ্ম শরীর হইতেও চেতনা যখন অপহৃত বা প্রত্যাহৃত হয়, তখনই