পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৬৫

 ‘চকিত আলোকে সহসা সুন্দরের’ দেখা দেওয়া এবং ‘তবুও ধরা না দেওয়া’ —উপনিষদে এই উপলব্ধির পূর্ণ সমর্থন রহিয়াছে। ব্রহ্মকে কোন ইন্দ্রিয় দ্বারাই ধরা যায় না, এ-আলোচনা একাধিকবার করা হইয়াছে। ‘চকিত আলোকে কখনও সহসা’ দেখা দেওয়ার সামান্য একটু সমর্থন উপনিষদ হইতে উদ্ধার করা যাইতেছে।

 কোনোপনিষদে ব্রহ্মদর্শন সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, — “যদেতৎ বিদ্যুতোবাদুতদ আ ন্যমীমিষদ্, আ—সেই ব্রহ্ম বিষয়ে এই উপদেশ, এই যে বিদ্যুৎপ্রভা চমকিত হইল, ইহারই সদৃশ। আর এই যে চক্ষুর নিমেষ হইল, ইহারই সদৃশ॥”

 ক্ষণিকের বিদ্যুৎপ্রকাশ যেমন যুগপৎ বিশ্বব্যাপী হয়, ব্রহ্মজ্যোতিও তেমনি ক্ষণিক বিদ্যুতালোকের ন্যায় অনন্তকে চিরন্তনকে শাশ্বতকে একটি মুহূর্তের মধ্যেই উদ্ঘাটিত করে। তাই রবীন্দ্রনাথও দেখিতে পাইয়াছেন—চকিত আলোকে কখনও সহসা দেখা দেয় সুন্দর।

 বৃহদারণ্যকোপনিষদেরও ঠিক এইরূপ একটি উক্তি পূর্বেই অন্য প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হইয়াছে—

 “তস্য হৈতস্য পুরুষস্য রূপম যথা সকৃদ্বিদ্যুত্তম্,—সেই পুরুষের রূপ কেমন? যেমন বিদ্যুতের ক্ষণিক ভাতি॥—রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধির বিবরণে এই উপদেশেরই প্রতিধ্বনি বা প্রতিরূপ পাওয়া যায়।

 ইহার পরে তাঁহার পত্রে কোনরূপ গোপন না করিয়া রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টভাবেই বলিয়া ফেলিয়াছেন—

দেখেছি দেখেছি এই কথা বলিবারে
 সুর বেধে যায় কথা না যোগায় মুখে,
 ধন্য যে আমি সে কথা জানাই কারে
 পরশাতীতের হরষ বাজে যে বুকে।।

 এই ঘোষণার অর্থ এত স্পষ্ট যে, কোনরূপ ব্যাখ্যারই প্রয়োজন করে না। যাহা চোখে দেখা যায়, তাহা দেখিয়া কেহ ‘দেখেছি দেখেছি’ বলিয়া এমন বিস্ময় এবং আনন্দ কদাচ প্রকাশ করিতে পারে না। আর, ‘সেকথা বলিবারে সুর বেধে যায় কথা না যোগায় মুখে’—এমন অবস্থাও নিশ্চয় হয় না।

 যাঁহাকে চোখে দেখা যায় না, তাঁহাকেই রবীন্দ্রনাথ দেখিয়াছেন, তাই রবীন্দ্রনাথের এত বিস্ময় এত আনন্দ। তাঁহাকেই তিনি পত্রের পরবর্তী ছত্রে বলিয়াছেন ‘পরশাতীত’— তিনি শুধু স্পর্শেরই অতীত নহেন, তিনি চক্ষুরাদি