পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

অপর ইন্দ্রিয়েরও অতীত। তাই তো রবীন্দ্রনাথের এমন বিস্মিত এবং আনন্দিত ঘোষণা—“ধন্য যে আমি, একথা জানাই কারে!”

 “পরশাতীতের হরষ বাজে যে বুকে”—রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতে ‘পরশাতীত’ বলিতে ব্রহ্মকে এবং ‘হরষ’ শব্দে ব্রহ্মের ‘আনন্দ’-কেই বুঝানো হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে ভাগবতে দেবর্ষি নারদের একটি উক্তি স্মরণ করা যাইতে পারে, দেবর্ষি নারদের উক্তিটি এই—“সুখই এই শরীরে দৃশ্যমান ভগবানের রূপ॥”

 রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন—‘দেখেছি দেখেছি’; আর দেবর্ষি নারদ বলেন যে, ভগবান যদি দৃশ্যমান হন-ই, তবে সুখ রূপটি লইয়াই তিনি শরীরের মধ্যে দেখা দেন। তাই রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতে দেখা যায় যে, যাঁহাকে তিনি দেখিয়াছেন, তাঁহাকে ‘হর্ষ’ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।

 দেবর্ষি নারদ বলিয়াছেন, “সুখই এই শরীরে দৃশ্যমান ভগবানের রূপ;” আর রবীন্দ্রনাথ সেই সুখস্থানটি আরও বিশেষভাবে নির্দেশ করিয়া বলিয়াছেন— “পরশাতীতের হরষ বাজে যে বুকে।” অর্থাৎ, হৃদয়েই তিনি সেই ‘পরশাতীতের’ আনন্দ-রূপটি দেখিতে পাইয়াছেন।

 বুকই পরশাতীতের হর্ষস্থান, রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির কোন সমর্থন উপনিষদে আছে কি?

 ছান্দোগ্য উপনিষদের একটি উপদেশে পাওয়া যায়, “স বা এষ আত্মা হৃদি। তস্য এতদেব নিরক্তম্। হৃদি অয়মিতি। তস্মাৎ হৃদয়ম্”—সেই আত্মা হৃদয়ে বিরাজিত। তাঁহার নিরুক্ত এইরূপ। ‘হৃদি অয়ম,’ তাই হৃদয়কে হৃদয় বলা হয়।

 ছান্দোগ্য ও অপরাপর উপনিষদে এই হৃদয়কেই ‘হৃদয়পুণ্ডরীক’ হৃদয়পদ্ম বলা হইয়াছে। হৃদয় বলিতে বক্ষকেই যে নির্দেশ করা হইয়াছে, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না। এই বুকে কে আছেন? উত্তরে উপনিষদ বলেন, “হৃদ্যাকাশময়ং কোশম্, আনন্দং পরমালয়ং"—হৃদয় আকাশই সেই কোশ, যাহা আনন্দের পরম আলয়।

 এখানে বুককেই পরম আনন্দের আলয় বলা হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথের ‘পরশাতীতের হরষ বাজে যে বুকে’—এই সত্যেরই উপলব্ধি। সর্বোপনিষদেই হৃদয় আকাশের উল্লেখ আছে এবং কোন কোন উপনিষদে এই আকাশকেই ব্রহ্ম বলা হইয়াছে দেখা যায়।

 রবীন্দ্রনাথের অপর একটি উপলব্ধিতে উপনিষদের এই তত্ত্বটি উপনিষদ অপেক্ষাও মনোরম ও হৃদয়গ্রাহীভাবে বর্ণিত হইয়াছে দেখা যাইবে—