বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৭১

 ইহার পরে তিনি দেখিতে পান—

শূন্য হতে জ্যোতির তর্জনী
স্পর্শ দিল একপ্রান্তে স্তম্ভিত বিপুল অন্ধকারে।
‘জ্যোতির তর্জনীর’ স্পর্শ; ইহার ফলে বা পরে—
পুরাতন সম্মোহের
স্থূল কারাপ্রাচীর বেষ্টন, মুহূর্তেই মিলাইল
কুহেলিকা॥

অবস্থাটা আরও পরিষ্কার করিয়া রবীন্দ্রনাথ বুঝাইয়াছেন—

অতীতের সঞ্চয়পুঞ্জিত দেহখানা, ছিল যাহা
আসন্নের বক্ষ হতে ভবিষ্যতের দিকে মাথা তুলি
বিন্ধগিরি ব্যবধান সম, আজ দেখিলাম
প্রভাতের অবসন্ন মেঘ তাহা, স্রস্ত হয়ে পড়ে
দিগন্ত বিচ্যুত॥

এই অবস্থায় থাকিয়াই রবীন্দ্রনাথ ঘোষণা করিয়াছেন

বন্ধমুক্ত আপনারে লভিলাম
সুদূর অন্তরাকাশে ছায়াপথ পার হয়ে গিয়ে
অলোক আলোকতীর্থে সূক্ষ্মতম বিলয়ের তটে॥

 অহং-এর পরিপূর্ণ বিলয়ের পরেই দেখা দেয় আত্মার পরিপূর্ণ প্রকাশ, তাহাই ‘বন্ধমুক্ত আপনারে’ লাভ করা। আপনার পরিপূর্ণ আত্ম-স্বরূপেই তিনি সেদিন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, ইহাই হইল রবীন্দ্রনাথের এই ঘোষণার নিগলিতার্থ।

 আর একদিনের এমনই এক অবস্থা বা উপলব্ধিতে রবীন্দ্রনাথ দেখিতে পাইয়াছেন যে, জীবন বা জগতের সঙ্গে তাঁহার বন্ধন-সূত্রটি আসলে একটি স্বপ্নসূত্রমাত্র। অকস্মাৎ ‘জন্মের সাথে লগ্ন স্বপ্নের’ সেই সূত্রটি ‘অদৃশ্যঘাতে’ ছিড়িয়া গেল, ইহা তিনি দেখিতে পান। তারপর তিনি জানাইয়াছেন,

সে মুহূর্তে দেখিনু সম্মুখে
অজ্ঞাত সুদীর্ঘপথ অতিদূর নিঃশব্দের দেশে
নিরাসক্ত নির্মমের পানে॥

 ‘দূর নিঃসঙ্গ নিরাসক্ত নির্মম’ ইত্যাদি উক্তিতে কাঁহাকে ইঙ্গিত করা হইয়াছে, খুলিয়া বলার দরকার করে না। ইহার পরেই তিনি বলিয়াছেন,