পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

অকস্মাৎ মহা একা
ডাক দিল একাকীরে প্রলয় তোরণ চূড়া হতে।
অসংখ্য অপরিচিত জ্যোতিষ্কের নিঃশব্দতা মাঝে
মেলিনু নয়ন ॥

 ‘মহা একাকী’ বলিতে ব্রহ্মকেই তিনি বুঝাইয়াছেন, যিনি একমেবাদ্বিতীয়ম্। আর, ‘অসংখ্য অপরিচিত জ্যোতিষ্ক’ অন্য কিছু নহে, বিদেহমুক্ত জ্যোতির্ময় পুরুষদেরই জ্যোতিষ্করূপে রবীন্দ্রনাথ দেখিতে পাইয়াছেন বা বর্ণনা করিয়াছেন, শুধু এইটুকু এখানে উল্লেখ করিয়া রাখা গেল।


 সেই সময়কার সর্বশেষ উপলব্ধির উল্লেখ এখন করা যাইতেছে। এই বিষয়ে পূর্বে অন্যত্র যাহা লিখিয়াছিলাম, সেইটুকুই এখানে উদ্ধৃত করিতেছি।

 “জীবনের শেষ দিনে ঋষি-কবি রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন। সেই সময়ে একদিন তিনি সংজ্ঞাশূন্য হইয়া বহুক্ষণ ছিলেন, শয্যার পার্শ্বে পরিচর্যারত সেবক এবং ভক্তগণ অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ও উদ্বিগ্ন হইয়া প্রতীক্ষা করিতেছিলেন যে, সংজ্ঞা আবার ফিরিয়া আসিবে, না ইহাই মৃত্যুর প্রথম স্পর্শ! সংজ্ঞা তাঁহার সেবার ফিরিয়া আসিয়াছিল এবং একটু সুস্থ হইয়া তাঁহার এই সংজ্ঞাহীন অবস্থার যে অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধি ঋষি কবি লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন, তাহা বিশেষ কারণেই একটু উদ্ধৃত করা যাইতেছে। সেদিনের সেই সংজ্ঞাহীন অবস্থা সম্বন্ধে তিনি বলিয়াছেন—

দেখিলাম অবসন্ন চেতনার গোধূলি বেলায়
দেহ মোর ভেসে যায় কালোকালিন্দীর স্রোত বাহি,
......ছায়া হয়ে বিন্দু হয়ে মিলে যায় দেহ
অন্তহীন তমিস্রায়। নক্ষত্রবেদীর তলে আসি
একা স্তব্ধ দাঁড়াইয়া ঊর্ধ্বে চেয়ে কহি জোড়হাতে—
হে পূষণ, সংহরণ করিয়াছ তব রশ্মিজাল
এবার প্রকাশে করো তোমার কল্যাণতম রূপ
দেখি তারে যে পুরুষ তোমার আমার মাঝে এক ॥

 এ কাহার চিত্র? একী মৃত্যু-পীড়িত হৃতচৈতন্য সংজ্ঞাহীন পুরুষ বা প্রাণীর চিত্র? না তাহা নহে। ইহা দেহাতীত পরম চৈতন্য সত্তায় অবস্থিতিরই এক অমর অভিজ্ঞতা, ইহা মহাযোগীর মহাযোগ-নিমগ্ন মূর্তি, ইহা সমাধির শিখর চূড়ায়