বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৭৫

রাজন, তোমার সিংহাসনের এক পাশে আমায় স্থান দাও। তুমি তো কেবল বিশ্বের রাজা নও, আমার সঙ্গে যে তোমার অনন্তকালের সম্বন্ধ॥”

 ‘মহানিষ্ক্রমণের দ্বার’ খুঁজিয়া না পাইলে ‘বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের রাজরাজেশ্বরের’ ‘চরণে গিয়া উপবেশন’ করা কখনো সম্ভবপর হয় কি? উপনিষদের ঋষি ব্রহ্মকে পিতা, সখা বলিয়া জানিয়াছেন এবং সম্বন্ধ স্থাপন করিয়াছেন, আর এ-যুগের, ঋষি তাঁহাকে ‘পরম প্রিয়’ বলিয়াই জানিয়াছেন, এখানে দেখা যায়। আর দেখা যায় যে, সেই ‘পরম প্রিয়ের’ পাশে প্রেমের স্বাধিকারেই আপন আসন দাবী করিয়াছেন।


 ১৩১১ সালে নিজের সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গতঃ এক স্থানে লিখিয়াছেন—

 “তত্ত্ববিদ্যায় আমার কোনো অধিকার নাই। দ্বৈতবাদ-অদ্বৈতবাদের কোনো তর্ক উঠিলে আমি নিরুত্তর হইয়া থাকিব। আমি কেবল অনুভবের দিক দিয়া বলিতেছি, আমার মধ্যে আমার অন্তর্দেবতার একটি প্রকাশের আনন্দ রহিয়াছে— সেই আনন্দ সেই প্রেম আমার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, আমার বুদ্ধিমন, আমার নিকট প্রত্যক্ষ এই বিশ্বজগৎ, আমার অনাদি অতীত ও অনন্ত ভবিষ্যৎ পরিপ্লুত করিয়া আছে। এ-লীলা তো আমি কিছুই বুঝি না, কিন্তু আমার মধ্যেই নিয়ত এই এক প্রেমের লীলা॥”

 ‘কেবল অনুভবের দিক দিয়া’ এখানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা আসলে তাঁহাকেই অনুভব—যিনি সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ।

 পূর্বোক্ত উক্তিটির বহু পূর্বে লিখিত একখানি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ নিজের সম্বন্ধে এই কয়টি কথা এক আত্মীয়াকে জানাইয়াছিলেন—

 “ঠিক যাকে সাধারণে ধর্ম বলে, সেটা যে আমি আমার নিজের মধ্যে সুস্পষ্ট দৃঢ়রূপে লাভ করতে পেরেছি, তা বলতে পারিনে। কিন্তু মনে ভিতরে ভিতরে ক্রমশ যে একটা সজীব পদার্থ সৃষ্ট হয়ে উঠছে, তা অনেক সময়ে অনুভব করতে পারি। বিশেষ কোন একটা নির্দিষ্ট মত নয়—একটা নিগূঢ় চেতনা একটা নূতন অন্তরিন্দ্রিয়। আমি বেশ বুঝতে পারছি, আমি ক্রমশ আপনার মধ্যে আপনার একটা সামঞ্জস্য স্থাপন করতে পারব—সমস্তটা মিলিয়ে জীবনটাকে একটা সমগ্রতা দিতে পারব॥”

 ‘একটা নিগূঢ় চেতনা একটা নূতন অন্তরিন্দ্রিয়’, বলিতে কি বুঝায়, সে–