পাতা:একঘরে - দ্বিজেন্দ্রলাল রায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
একঘরে।

কোথায় অধর্ম্মের সহিত সমরপরিশ্রান্ত বঙ্গীয় যুবকের মস্তক কোমল ক্রোড়ে রাখিবে; কোথায় তুমি এ জীবনের বিপন্ময় গিরি সঙ্কটে—অপ্সরাকণ্ঠে প্রেমের বিমল সঙ্গীত শুনাইবে; না তুমিই বঙ্গে সর্ব্ব উন্নতির বাধা, সর্ব্ব নিষ্কর্ম্মতার ওজোর, সর্ব্ব পাপের কারণ!!!

 মহাশয়! আমরা সত্য সে জাতি নহি, যে শুদ্ধ ‘পৃথিবী ঘুরিতেছে’ বলিয়া চিরান্ধকার কারাগারে যাইতে প্রস্তুত; সে জাতি নহি, যে জাতি ‘এই হাতে মিথ্যা লিখিয়াছিল ইহা অগ্রে পুড়ুক,’ এ কথা জ্বলন্ত অনলের সম্মুখে নির্ভয়ে বলিতে পারে। কিন্তু যে সমাজ কস্তার কুলীন বা ধনী বরের প্রত্যাশায় মিছা কথা কহিতে পারে, শঠতার স্রোতে গা ঢালির দিতে পারে, ও সত্যের স্নেহের জ্ঞানের বিবেকের মস্তকে কুঠার মারিতে পারে, সে জাতির আশা নাই।

 আমরা ভীরুর জাতি। বিলাত-ফেরতেরা অন্ততঃ আমি যে সে ভীরুতা হইতে মুক্ত তাহ বলি না। আমরা—অন্ততঃ আমি যে বিশ্বাসের জন্য হাত পুড়াইতে পারি, বা ক্রুশে ঝুলিতে পারি, তাহা বলি না। যদি কেহ বলে যে “বল পৃথিবী স্থির, নইলে তোমার নাসিকাটি কাটিয়া মুখ সমভূমি করিয়া দিব,” তাহা হইলে, যদি দেখি যে শাণিত ছুরির তামাসাটা সঙ্গীন হইয়া দাঁড়াইতেছে, ত বলি “তা যদি পৃথিবীর ঘোরার সহিত আমার নাসিকার অস্তিত্বের এত গূঢ় সম্বন্ধ থাকে, ত পৃথিবী মোটে ঘোরে না; পৃথিবী হিন্দু সমাজের মত স্থির ও নিশ্চল।”

 কি করিব, হাত পুড়াইতে পারি না সত্য, মরিতে পারি না সত্য, কিন্তু মহাশয় আপনার সহিত আমার একটু প্রভেদ, যে এক কন্যাদায়ে বিবেককে এত মলিন করিতে পারি না। হিন্দু সমাজের ফলারে এত সুধা নাই, কন্যার এক ধনী বা কুলীনবরে এমন মাধুরী নাই, যাহার জন্য মিথ্যার কর্দ্দমে, ক্ষুদ্রতার আঁস্তাকুড়ে, লুকোচুরির ময়লাময় জঙ্গলে জীবনকে, ধর্ম্মকে, বিবেককে বিসর্জ্জন দিব।