আলিঙ্গিত ধর্ম্ম হইতে অবিশ্বাসী হয় নাই। আর আপনার বিশ্বাস যে এক সম্ভাব্য কন্যাদায়ে, নিস্ফলারতার আরামময় ভীতিতে আমরা পুণ্যের প্রায়শ্চিত্ত করিব? যে একঘরের অর্থ দেশের মান্য, জাতির ভক্তি, যে একঘরের অর্থ পরিচ্ছন্নতা, স্বচ্ছন্দতা, নিরাস্তাঁকুড়তা, কদলীপত্রহীনতা, সেই একঘরের ভয়ে আমরা ভীরুতার মিথ্যার লজ্জাময় ঘৃণাময় পঙ্কে আত্মাকে কলুষিত করিব!!!
বলিতে ঘৃণা হয়, শরীরে শত বৃশ্চিকের দংশন জ্বালা হয়, যে এই লক্ষ্মীবর্জ্জিত দেশে আমার লক্ষ্মী-বর্জ্জিত জাতি, এই এক কন্যাদায়ে, এই ‘জাতের’ খাতিরে, আজ ভণ্ডামীর দোকান খুলিয়া বসিয়াছেন; ভীরুতার, শঠতার, ক্ষুদ্রতার রাজত্বে ঢকিয়াছেন; এ বিপুলা বসুন্ধরার কোণে নিশ্চল হইয়া পড়িয়া আছেন। এই এক প্রশ্ন হিন্দুসমাজের বিধাতা। এই কন্যার বিবাহ সর্ব্ব বিঘ্নের মূল, সর্ব্ব উন্নতির পর্ব্বতসম বাধা। ইহার কাছে দেশের হিতৈষিতা উৎসর্গীকৃত; ইহার কাছে হিন্দুর সাহস পরাজিত। ইহার জন্য অন্তরে ব্রাহ্ম হইলেও অনেকে প্রকাশ্যে ব্রাহ্ম হইতে পারেন না। ইহার জন্য অনেকে দশমাধিক বয়স্কা বালিকাকে বিদ্যালয়ে পাঠাইতে কুণ্ঠিত হন; ইহার জন্য কেহ দ্বাদশ বর্ষাধিক কন্যাকে অবিবাহিত রাখিতে সাহসী হন না; ইহার জন্য কেহ শিশু বিধবাকে বিবাহ দিতে অগ্রসর হন না; ইহার জন্য মিছা কথা, লুকাচুরি, অধর্ম্ম; ইহার জন্য লুকাইয়া খাওয়া; ইহার জন্য প্রকাশ্যে ভ্রাতৃত্যাগ, পুত্রত্যাগ, বন্ধুত্যাগ; ইহার মন্ত্রবলে জাতি অথর্ব্ব, নিৰ্জ্জীব; ইহার বিষময়ী জ্বালার ভয়ে সপ্ত কোটী মানব আজ ত্রস্ত, বদ্ধহস্ত,—“নিবাত নিষ্কম্পমিব প্রদীপম্।”
—অহো রমণীজাতি! আজ তুমিই বঙ্গের সর্বনাশের উপায় হইলে! তুমিই সর্ব্বপ্রকার মঙ্গল কর্ম্মের বাধা হইলে! তুমিই ভীরুতার, অধর্ম্মের কেন্দ্র হইলে! ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমাকে অন্য উদ্দেশ্যে বঙ্গে প্রেরণ করিয়াছিলেন। কোথায় তুমি বঙ্গবাসীর উন্নতির যজ্ঞে সহধর্ম্মিণী হইবে;