পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
ঔপনিষদ ব্রহ্ম।

মত্ততার বিহ্বলতায় মাতাল বিশ্বসংসারকে নগণ্য করিয়া যে অন্ধ আনন্দ উপভোগ করে সে আনন্দের শ্রেয়ঙ্করতা নাই। বিদ্যা এবং অবিদ্যা, সৎ এবং অসৎ, ব্রহ্ম এবং সংসার উভয়কেই স্বীকার করিতে হইবে। দুঃখের হাত এড়াইবার জন্য কর্ত্তব্য বন্ধন ছেদন করিবার অভিপ্রায়ে সংসারকে একেবারেই “না” করিয়া দিয়া একাকী আনন্দ সম্ভোগে প্রবৃত্ত হওরা একজাতীয় প্রমত্ততা। সত্যের একদিককে উপেক্ষা করিলে অপর দিকও অসত্য হইয়া উঠে। ঈশ্বরের আদেশ পালনকে যে অস্বীকার করে, সে মুখে যাহাই বলুক ঈশ্বরকে সম্পূর্ণ স্বীকার করে না। বরঞ্চ ঈশ্বরকে মুখে অস্বীকার করিয়া যে ব্যক্তি মনুষ্যের প্রতি কর্তব্যানুষ্ঠান করে সে কঠিন কর্ম্মের দ্বারা ঈশ্বরকে স্বীকার করিয়া থাকে।

 জ্ঞানে এবং ভোগে এবং কর্ম্মে ব্রহ্মকে স্বীকার করিলেই তাঁহাকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করা হয়। সেইরূপ সর্ব্বাঙ্গীনভাবে ব্রহ্মকে উপলব্ধি করিবার একমাত্র স্থান এই সংসার—আমাদের এই কর্ম্মক্ষেত্র; ইহাই আমাদের ধর্ম্মক্ষেত্র, ইহাই ব্রহ্মের মন্দির। এখানে জগৎমণ্ডলের জ্ঞানে ঈশ্বরের জ্ঞান, জগৎ সৌন্দর্য্যের ভোগে ঈশ্বরের ভোগ এবং জগৎসংসারের কর্ম্মে ঈশ্বরের কর্ম্ম জড়িত রহিয়াছে;— সংসারের সেই জ্ঞান সৌন্দর্য্য ও ক্রিয়াকে ব্রহ্মের দ্বারা বেষ্টিত করিয়া জানিলেই ব্রহ্মকে অন্তরতর করিয়া জানা যায় এবং সংসারযাত্রাও কল্যাণকর হইয়া উঠে। তখন ত্যাগ এবং ভোগের সামঞ্জস্য