পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঔপনিষদ ব্রহ্ম।
১৯

হয়, কাহারও ধনে লোভ থাকে না, অনর্থক বলিয়া জীবনের প্রতি উপেক্ষা জন্মে না, শতবর্ষ আয়ু যাপন করিলেও পরমায়ুর সার্থকতা উপলব্ধি হয়— এবং সেই অবস্থায়

যস্তু সর্ব্বাণি ভূতানি আত্মন্যেবানুপশ্যতি,
সর্ব্বভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজুগুপ্সতে।

যিনি সমস্ত ভূতকে পরমাত্মার মধ্যে দেখেন, এবং সর্ব্ব ভূতের মধ্যে পরমাত্মাকে দেখেন তিনি কাহাকেও ঘৃণা করেন না।

 গম্যস্থানের পক্ষে পথ যেমন একইকালে পরিহার্য্য এবং অবলম্বনীয় ব্রহ্মলাভের পক্ষে সংসার সেইরূপ। পথকে যেমন আমরা প্রতিপদে পরিত্যাগ করি এবং আশ্রয় করি সংসারও সেইরূপ আমাদের প্রতিপদে বর্জ্জনীয় এবং গ্রহণীয়। পথ নাই বলিয়া চক্ষু মুদিয়া পথপ্রান্তে পড়িয়া স্বপ্ন দেখিলে গৃহ লাভ হয় না—এবং পথকেই শেষ লক্ষ্য বলিয়া বসিয়া থাকিলে গৃহে গমন ঘটে না। গম্যস্থানকে যে ভাল বাসে, পথকেও সে ভালবাসে; পথ গম্যস্থানেরই অঙ্গ, অংশ এবং আরম্ভ বলিয়া গণ্য। ব্রহ্মকে যে চায়, ব্রহ্মের সংসারকে সে উপেক্ষা করিতে পারে না— সংসারকে সে প্রীতি করে এবং সংসারের কর্ম্মকে ব্রহ্মের কর্ম্ম বলিয়াই জানে।

 আর্য্যধর্ম্মের বিশুদ্ধ আদর্শ হইতে যাহারা ভ্রষ্ট হইয়াছেন তাঁহারা বলিবেন সংসারের সহিত যদি ব্রহ্মের যোগ সাধন করিতে হয় তবে ব্রহ্মকে সংসারের উপযোগী করিয়া গড়িয়া লইতে হইবে। তাই যদি হইল তবে সত্যের প্রয়োজন কি?