পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
ঔপনিষদ ব্রহ্ম

বস্তুর ন্যায় বাঙ‍্মনোগোচর-ক্ষুদ্র করিয়া খণ্ড করিয়া দেখিলে আমরা সেই পরম অভয়, সেই ভূমা আনন্দ লাভ করিতে পারি না। আমরা ত সংসারের সঙ্কীর্ণতা-দ্বারা প্রতিহত, জটিলতা দ্বারা উদ‍্ভ্রান্ত, খণ্ডতা দ্বারা শতধা-বিক্ষিপ্ত হইয়া আছি,—আমরা জানি সংসারের “স্রোতাংসি সর্ব্বাণি ভয়াবহানি,” সংসারের সমুদয় শ্রোত ভয়াবহ—সকলেরই মধ্যে ভয়দুঃখক্লেশ জরামৃত্যুবিচ্ছেদের কারণ রহিয়াছে;—অতএব আমরা যখন শাস্তি চাই, অভয় চাই, আনন্দ চাই, অমৃত চাই তখন সহজেই স্বভাবতই কাহাকে চাই? যাহাকে পাইলে শান্তিমত্যন্তমেতি, অত্যন্ত শান্তি পাওয়া যায়। তিনি কে? উপনিষৎ বলেন স বৃক্ষকালাকৃতিভিঃ পরোহন্যঃ তিনি সংসার, কাল এবং আকৃতি অর্থাৎ সাকার পদার্থ হইতে পরঃ, শ্রেষ্ঠ, এবং অন্যঃ অর্থাৎ ভিন্ন। যদি তিনি সংসার, কাল, ও সাকার পদার্থ হইতে শ্রেষ্ঠ এবং ভিন্ন না হইতেন তবে ত সংসারই আমাদের যথেষ্ট ছিল—তবে ত তাঁহাকে অন্বেষণ করিবার প্রয়োজন ছিল না।

 বিশ্বষ্যৈকং পরিবেষ্টিতারং জ্ঞাত্বা শিবং শাস্তিমত্যস্তমেতি।

 বিশ্বের একমাত্র পরিবেষ্টিতাকে জানিয়া অত্যন্ত শিব এবং অত্যন্ত শান্তি পাওয়া যায়। অতএব যাঁহারা বলেন আমরা সেই ভূমা স্বরূপকে আয়ত্ত করিতে পারি না সেই জন্য তাঁহাতে আমাদের স্থিতি আমাদের শান্তি নাই তাঁহারা উপনিষৎকথিত পরম সত্য হইতে স্খলিত হইতেছেন—