পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঔপনিষদ ব্রহ্ম
২১

আচ্ছন্ন করিয়া বিরাজ করিতেছেন সংসারী সেই ব্রহ্মকেই সর্ব্বত্র অনুভব করিবেন উপনিষদের এই অনুশাসন।

 দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তি বলিবেন, উপদেশ সত্য হইতে পারে কিন্তু তাহা পালন কঠিন। অরূপ ব্রহ্মের মধ্যে দুঃখ শোকের নির্ব্বাপন সহজ নহে। কিন্তু যদি সহজ না হয় তবে দুঃখ নির্ব্বাপনের, মুক্তি লাভের অন্য যে কোন উপায় আরও কঠিন—কঠিন কেন অসাধ্য। স্বতঃপ্রবাহিত অগাধ স্রোতস্বিনীর মধ্যে অবগাহন স্নান যদি কঠিন হয় তবে স্বহস্তে ক্ষুদ্রতম কূপ খনন করিয়া তাহার মধ্যে অবতরণ আরও কত কঠিন—তাই বা কেন, নিজের ক্ষুদ্র কলস-পরিমিত জল নদী হইতে বহন করিয়া স্নান করা সেও দুরূহতর। যথন ব্রহ্মকে অরূপ অনন্ত অনির্ব্বচনীয় বলিয়া জানি তখনি তাঁহার মধ্যে সম্পূর্ণ আত্মবিসর্জ্জন অতি সহজ হয়—তখনি তাঁহার দ্বারা পরিপূর্ণ রূপে পরিবৃত হইয়া আমাদের ভয় দুঃখ শোক সর্ব্বাংশে দূর হইয়া যায়। এই জন্যই উপনিষদে আছে—

যতোবাচো নিবর্ত্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ,
আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান্ ন বিভেতি কুঁতশ্চন

মনের সহিত বাক্য যাঁহাকে না পাইয়া নিবৃত্ত হইয়া আসে সেই ব্রহ্মের আনন্দ যিনি জানিয়াছেন তিনি আর কাহা হইতেও ভয় পান না। অতএব ব্রহ্মের সেই বাক্যমনের অগোচর অনস্ত পরিপূর্ণতা উপলব্ধি করিলে তবেই আমাদের ভয় দুঃখ নিঃশেষে নিরস্ত হয়। তাঁহাকে বিশ্বজগতের অন্যান্য