পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫
ঔপনিষদ ব্রহ্ম
২৫

করিয়া ব্রহ্মলাভের সহজ উপায়স্বরূপ সাকার পদার্থকে অবলম্বন করেন তাঁহারা একথা বিচার করিয়া দেখেন না যে, ঐকান্তিক সহজ কঠিন বলিয়া কিছু নাই। সন্তরণ অপেক্ষা পদব্রজে চলা সহজ বলিয়া মানিয়া লইলেও একথা স্বীকার করিতেই হইবে যে, জলের উপর দিয়া পদব্রজে চলা সহজ নহে—সেখানে তদপেক্ষা সন্তরণ সহজ। অপ্রত্যক্ষ পদার্থকে মনন দ্বারা জানা অপেক্ষা প্রত্যক্ষ পদার্থকে চক্ষু দ্বারা দেখা সহজ একথা স্বীকার্য কিন্তু তাই বলিয়া অতীন্দ্রিয় পদার্থকে চক্ষু দ্বারা দেখা সহজ নহে —এমন কি, তাহা অসাধ্য। তেমনি সাকার মুর্ত্তির রূপ ধারণা সহজ সন্দেহ নাই কিন্তু সাকার মূর্ত্তির সাহায্যে ব্রহ্মের ধারণা একেবারেই অসাধ্য, কারণ, স বৃক্ষকালাকৃতিভিঃ পরোঽন্যঃ তিনি সংসার হইতে কাল হইতে সাকার পদার্থ হইতে শ্রেষ্ঠ এবং ভিন্ন এবং সেই জন্যই তাঁহাতে সংসারাতীত দেশকালাতীত শিবং শান্তিমত্যন্তমেতি অত্যন্ত মঙ্গল এবং অত্যন্ত শান্তিলাভ হয়; অথচ তাঁহাকে পুনশ্চ আকৃতির মধ্যে বন্ধ করিয়া ধারণা করিবার চেষ্টা এত কঠিন যে তাহা অসাধ্য, অসম্ভব, তাহা স্বতোবিরোধী।

 কিন্তু সহজ কঠিনের কথা উঠে কেন? আমরা সহজ চাই, না সত্য চাই? সত্য যদি সহজ হয় ত ভাল, যদি না হয় তবু সত্য বই গতি নাই। পৃথিবী কুর্ম্মের পৃষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত আছে এ কথা ধারণা করা যদি কাহারও পক্ষে সহজ হয়,