পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ঔপনিষদ ব্রহ্ম

তথাপি বিজ্ঞান-পিপাসু সত্যের মুখ চাহিয়া তাহাকে অশ্রদ্ধেয় বলিয়া অবজ্ঞা করেন। মরু- প্রান্তরের মধ্যে ভ্রাম্যমান ক্ষুধার্ত্ত যখন অন্ন চায়, তখন তাহাকে বালুকাপিণ্ড আনিয়া দেওয়া সহজ—কিন্তু সে বলে আমি ও সহজ চাই না, আমি অন্নপিণ্ড চাই—সে অন্ন এখানে যদি না পাওয়া যায়, তরে দুরূহ হইলেও তাহাকে অন্যত্র হইতে আহরণ করিতে হইবে, নহিলে আমি বাঁচিব না। তেমনি সংসার মধ্যে আমরা যখন অধ্যাত্ম-পিপাসা মিটাইতে চাই তখন কল্পনামরীচিকায় সে কিছুতেই মিটে না—যত দুর্লভ হউক্ সেই পিপাসার জল—আত্মার একমাত্র আকাঙ্ক্ষণীয় পরমাত্মাকেই চাই—তিনি নিরাকার নির্ব্বিকার বাক্যমনের অগোচর হইলেও তবু তাঁহাকেই চাই, নহিলে আমাদের মুক্তি নাই। ধর্ম্মপথ ত সহজ নহে, ব্রহ্মগাভ ত সহজ নহে, সে কথা সকলেই বলে—দুর্গং পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি—সেই জন্যই মোহনিদ্রাগ্রস্ত সংসারীর দ্বারে দাঁড়াইয়া ঋষি উচ্চস্বরে ডাকিতেছেন—“উত্তিষ্ঠত, জাগ্রত”—না উঠিলে না জাগিলে এই ক্ষুরধার-নিশিত দুর্গম দুরতায় পথে চক্ষু মুদিয়া চলা যায় না, আত্মার অভাব আলস্যভরে অনায়াসে মোচন হয় না—এবং ব্রহ্ম ক্রীড়াচ্ছলে কল্পনাবাহিত মনোরথের গম্য নহেন। সংসারে যদি বিদ্যালাভ, বিত্তলাভ, যশোলাভ সহজ না হয়, তবে ধর্ম্মলাভ, সত্যলাভ, ব্রহ্মলাভ সহজ, এমন আশ্বাস কে দিবে এবং সে আশ্বাসে কে ভুলিবে!