ঠিকানায় যাওয়া যায়। মৃন্ময়ী সেই ডাকের পথ ধরিয়া চলিতে লাগিল। চলিতে চলিতে শরীর শ্রান্ত হইয়া আসিল রাত্রিও প্রায় শেষ হইল। বনের মধ্যে যখন উস্খুস্ করিয়া অনিশ্চিত সুরে দুটো একটা পাখী ডাকিবার উপক্রম করিতেছে অথচ নিঃসংশয়ে সময় নির্ণয় করিতে না পারিয়া ইতস্ততঃ করিতেছে তখন মৃন্ময়ী পথের শেষে নদীর ধারে একটা বৃহৎ বাজারের মত স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইল। অতঃপর কোন্দিকে যাইতে হইবে ভাবিতেছে এমন সময় পরিচিত ঝম্ঝম্ শব্দ শুনিতে পাইল। চিঠির থলে কাঁধে করিয়া উর্দ্ধশ্বাসে ডাকের রানার আসিয়া উপস্থিত হইল। মৃন্ময়ী তাড়াতাড়ি তাহার কাছে গিয়া কাতর শ্রান্তস্বরে কহিল, “কুশীগঞ্জে আমি বাবার কাছে যাব, আমাকে তুমি সঙ্গে নিয়ে চল না!” সে কহিল, “কুশীগঞ্জ কোথায় আমি জানিনে।” এই বলিয়া ঘাটে বাঁধা ডাক-নৌকার মাঝিকে জাগাইয়া দিয়া নৌকা ছাড়িয়া দিল। তাহার দয়া করিবার বা প্রশ্ন করিবার সময় নাই।
দেখিতে দেখিতে ঘাট এবং বাজার সজাগ হইয়া উঠিল। মৃন্ময়ী ঘাটে নামিয়া একজন মাঝিকে ডাকিয়া কহিল, “মাঝি, আমাকে কুশীগঞ্জে নিয়ে যাবে?” মাঝি তাহার উত্তর দিবার পূর্ব্বেই পাশের নৌকা হইতে একজন বলিয়া উঠিল, “আরে কেও? মিনু মা তুমি এখানে কোথা থেকে?” মৃন্ময়ী উচ্ছ্বসিত ব্যগ্রতার সহিত বলিয়া উঠিল, “বনমালি, আমি কুশীগঞ্জে বাবার কাছে যাব, আমাকে তোর নৌকায় নিয়ে চল্।”