পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
কপালকুণ্ডলা।

তখন অধরপার্শ্বে ও নয়নপ্রান্তে ঈষৎ হাসি ব্যক্ত হইল। ভাল করিয়া দেখিবার জন্য প্রদীপটী তুলিয়া কপালকুণ্ডলার মুখের নিকট আনিলেন। তখন সে হাসি হাসি ভাব দূর হইল;—মতির মুখ গম্ভীর হইল;—অনিমিক্ লোচনে দেখিতে লাগিলেন। কেহ কোন কথা কহেন না;—মতি মুগ্ধা, কপালকুণ্ডলা কিছু বিস্মিতা।

 ক্ষণেক পরে মতি আপন অঙ্গ হইতে অলঙ্কাররাশি মোচন করিতে লাগিলেন। নবকুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি করিতেছ?” মতি কহিলেন, “দেখুন না।” মতি আত্মশরীর হইতে অলঙ্কাররাশি মুক্ত করিয়া একে একে কপালকুণ্ডলাকে পরাইতে লাগিলেন। কপালকুণ্ডলা কিছু বলিলেন না। নবকুমার কহিতে লাগিলেন, “ও কি হইতেছে?” মতি তাঁহার কোন উত্তর করিলেন না।

 অলঙ্কারসমাবেশ সমাপ্ত হইলে, মতি নবকুমারকে কহিলেন, “আপনি সত্যই বলিয়াছিলেন। এ ফুল রাজোদ্যানেও ফুটে না। পরিতাপ এই যে রাজধানীতে এ রূপরাশি দেখাইতে পারিলাম না। এ সকল অলঙ্কার এই অঙ্গেরই উপযুক্ত—এই জন্য পরাইলাম। আপনিও কখন কখন পরাইয়া মুখরা বিদেশিনীকে মনে করিবেন।”

 নবকুমার চমৎকৃত হইয়া কহিলেন, “সে কি? এ যে বহুমূল্য অলঙ্কার। আমি এ সব লইব কেন?”

 মতি কহিলেন “ঈশ্বরপ্রসাদাৎ আমার আর আছে। আমি নিরাভরণা হইব না। ইহাকে পরাইয়া আমার যদি সুখবোধ হয়, আপনি কেন ব্যাঘাত করেন?”