পাতা:কবিকঙ্কণ-চণ্ডী (প্রথম ভাগ) - চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাদেবের দেবত্বের ক্রমবিকাশের ইতিহাস d. 9 খণ্ডিত হন। খণ্ডিত গৌরীকে সতত স্বামী-পাহারা দিবার সুযোগ দিবার জন্য শিব দেহাৰ্দ্ধভাগ ছাড়িয়া দিয়া শাস্ত করেন। পাৰ্ব্বতীর এই কালী রূপ হইতে গৌরী হওয়ার উপাখ্যানের মধ্যে অনা-আৰ্য্য কৃষ্ণকায় লোকের কৃষ্ণকায় দেবতার গৌর আর্য্যজাতির গৌরবর্ণ দেবতায় পরিবষ্ঠিত হওয়ার ইতিহাস প্রচ্ছন্ন আছে। কালী যখন প্ৰথম আবিভূতি হন তখন তিনি ছিলেন বিন্ধ্যবাসিনী-অনাৰ্য্য দেশের দেবতা ; পরে তঁাকে হিমালয়-দুহিতা দক্ষ-দুহিত করা ठूग्न । কুৰ্ম্মপুরাণ বলেন-সৃষ্টিকৰ্ম্মের জন্য তপস্যারত ব্ৰহ্মার মুখ হইতে রুদ্র একেবারে অৰ্দ্ধনারীশ্বর ( Hermaphrollite ) মুষ্টি ত আবির্ভূত হন এবং পাবে বিভক্ত হইয়া শিব ও শক্তি রূপ ধারণ করেন। এই আখ্যায়িকার মধ্যে ভাবতবহির্ভাগের আদি দেব-কল্পনার আভাস পাওয়া যায়। ইজিপ্ট ব্যাবিলন সীরিয়া তিব্বত প্রভৃতি মাতৃতন্ত্রের দেশের পুরাণ বলে-আদিতে এক দেবী ছিলেন; তিনি সৃষ্টিকাৰ্য্যে প্ৰবৃত্ত হইয়া আপনাতে আপনি পুত্র উৎপাদন করেন এবং সেই পুত্র তার সহচর পতি হয়। মাতৃতন্ত্রেব আখ্যায়িকা পুরুষতন্ত্রে পবিবৰ্ত্তিত হইয়া শিবের অৰ্দ্ধনারীশ্বর মূৰ্ত্তি সৃষ্টি করিয়াছে। এইরূপ যুক্ত-রূপ কল্পনার কারণ পরবর্তী কালে দার্শনিক তত্ত্বে ব্যাখ্যা করিয়া পুরুষ-প্রকৃতির অভেদত্ব-প্ৰতিপাদক বলা হইয়াছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিবদমান ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের আপোষ রফাব চেষ্টার ও ইতিহাস পাওয়া যায় । [ শৈব ও শাক্ত ধৰ্ম্মের আপোষের ফল হরগৌরী-মূৰ্ত্তি; শৈব ও বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের মিলনের ফল হরিহার-মূৰ্ত্তি ( বিষ্ণুপুরাণ ও স্কন্দপুবাণ ); এবং বৈষ্ণব ও শাক্তেব মত-সমন্বয়ের ফল কৃষ্ণকালীরূপের পরিকল্পনা ( রাধাতন্ত্র)। ] প্ৰাচীন ঈজিপ্ট ব্যাবিলন সীবিয়া প্ৰভৃতি দেশে মাতৃতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্র সমাজব্যবস্থা পাশাপাশি দেখা যাইত; মাতৃতন্ত্রের লোকেরা ছিল চন্দ্র-উপাসক; এবং পিতৃতন্ত্রের লোকেরা ছিল সুৰ্য্য-উপাসক। এই দুই সমাজের মিলনে যখন উভয়ের উপাসনাপদ্ধতি ও সন্মিলিত হয়, তপন মাতাপিতাব একত্র মিলন কল্পনাব ফল এইরূপ যুক্ত বা যুগানদ্ধ মূৰ্ত্তি; সুৰ্য্যরূপ শিবের ললাটে চন্দ্র স্থাপন, শকদেব ভারতে আসিয়া সূৰ্য্যবংশীয় ও চন্দ্ৰবংশীয় ক্ষত্ৰিয় হওয়া প্ৰভৃতির মধ্যেও এই সূৰ্য্যচন্দ্র-উপাসনার আভাস পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের প্রতিরোধিতার সময় মহাদেবকেই যখন বুদ্ধদেবের সকল গুণে ভূষিত করা হইতেছিল, তখন বৌদ্ধধৰ্ম্মেব উপর শৈবধৰ্ম্মের বিজয়ধ্বজ তুলিয়া মহাদেবকে বৃষধ্বজ করা হয়। এই বৃষ আসলে হইতেছে ধৰ্ম্ম-যে ধৰ্ম্ম বৌদ্ধদের আদিদেব, ত্রিরিত্বের মধ্যমণি। আমরা দেখিয়াছি। ঋগ্বেদে স্বয়ং রুদ্রকেই বৃষভ বলা হইয়াছে; গহসূত্রে রুদ্রতোষণের জন্য শূলগব যজ্ঞ করা হইত ; তখনো বৃষ মহাদেবের বাহন হয় নাই। বৃষবাহন মহাদেবের সাক্ষাৎ পাই প্রথম মহাভারতে। ব্ৰহ্মা দেবধেনু সুরভী সৃজন