পাতা:কমলা - আশুতোষ ভট্টাচার্য্য.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কমলা কালে মেঘ চাদের উপরে আসিয়া পড়িয়া জ্যোৎস্নাটাকে নিভাইয়া ফেলিতেছিল। সে আকাশের দিকে অঙ্গুলিনিৰ্দেশ করিয়া বলিল- “ঐ দেখ! ঠিক যেন ঐ রকমের একটা কালো মেঘ মাঝে মাঝে আমার মনে এসে আমার সব আনন্দকে নিভিয়ে দেয় । যখনই আমি আপনাকে বড় সুখী-বড় ভাগ্যবতী মনে করি, তখনই যেন কে আড়ালে থেকে আমার কাণের কাছে বলে—তোর এ সুখ-এ। সৌভাগ্য বেশী দিনের জন্যে নয় ।”-কমলা আবার একবার দুই করে চক্ষুদুটিকে মুছিয়া লইয়া বলিল—“সত্যিই কি আমার কপাল এত ভাল হ’য়েও এতই মন্দ হবে যে, পেয়েও আমি তোমার ভালবাসা হারাব ? তোমার ভালবাসাই আমার সুখ-আমার সর্বস্ব ; আজ আমার মত সুখ কা’র— আমার মত ভাগ্যবতী কে ? কিন্তু কাল যদি আমি তোমার ভালবাসা হারাই, আমার কি থাকবে—আমার মত দুঃখিনী জগতে আর কে থাকবে ?” কমলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া নীরব হইল। পদ্মাপলাশপ্ৰান্তে শিশির-বিন্দুর মত দুই বিন্দু অশ্রু আবার তাহার নয়ন-প্ৰান্তে জাগিয়াছিল। বিরাজ ধীরে ধীরে তাহা মুছাইয়া দিয়া বলিল, “আলোর মধ্যেও ছায়ার কল্পনা ক’রে দুঃখ ডেকে আন কেন, কমলা ? আমাকে হারাতে পার, কিন্তু আমার ভালবাসা হারাবে এ আশঙ্কাকে মনে আসতে দিও না ! অন্য দুঃখ ?-আসতে পারে, চঞ্চল মানব-ভাগ্যে কখন কি ঘটবে।-কে জানে ? প্ৰকৃতির দিনরাত্রির মত সুখদুঃখ মানুষের ভাগ্যে নিয়ত ফিরে ফিরে আসে। কিন্তু যে আলো সংগ্ৰহ ক’রেছে। অন্ধকারে তার ভয় কি ? জীবনের অন্ধকারে সে আলোর নাম-ভালবাসা । - দুঃখ আসুকদরিদ্রতা আসুক, দুদিনের অন্ধকারে বিপদের মেঘ মাথার উপরে | ૨6