পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বরাজস্বাধন
২৭১

প্রভৃতি মজুরির কাজ লাইন বাঁধা কাজ। তা চলে ট্রামগাড়ির মতাে। হাজার প্রয়ােজন হলেও লাইনের বাইরে নতুন পথ তার পক্ষে সহজ নয়। চাষিকে চাষের বাইরে যে কাজ করতে বলা যায় তাতে তার মন ডিরেলড হয়ে যায়। তবু ঠেলেঠুলে তাকে হয়তাে নড়ানাে যেতে পারে, কিন্তু তাতে শক্তির বিস্তর অপব্যয় ঘটে।

 বাংলাদেশের অন্তত দুই জেলার চাষির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয়। অভ্যাসের বাঁধন তাদের পক্ষে যে কত কঠিন তার অভিজ্ঞতা আমার আছে। এক জেলা এক ফসলের দেশ। সেখানে ধান উৎপন্ন করতে চাষিরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। তার পরে তাদের ভিটের জমিতে তারা অবসরকালে সবজি উৎপন্ন করতে পারত। উৎসাহ দিয়েছিলুম, ফল পাই নি। যারা ধান চাষের জন্যে প্রাণপণ করতে পারে, তারা সবজি-চাষের জন্য একটুও নড়ে বসতে চায় না। ধানের লাইন থেকে সবজির লাইনে তাদের মনকে ঠেলে তােলা কঠিন।

 আর-এক জেলায় চাষি ধান পাট আখ সর্ষে প্রভৃতি সকল-রকম চাষেই লেগে আছে। কিন্তু, যে জমিতে এ-সব শস্য সহজে হয় না সে জমি তদের বৃথা পড়ে থাকে, তার খাজনা বহন করে চলে। অথচ বৎসরে বৎসরে পশ্চিম-অঞ্চল থেকে চাষি এসে এই জমিতেই তরমুজ খরমুজ কাকুড় প্রভৃতি ফলিয়ে যথেষ্ট লাভ করে নিয়ে দেশে ফিরে যায়। তবু স্থানীয় চাষি এই অনভ্যস্ত ফসল ফলিয়ে অবস্থার উন্নতি করতে বিমুখ। তাদের মন সরে না। যে চাষি পাটের ফলন করে তাকে স্বভাবত অলস বলে বদনাম দেওয়া চলে না। শুনেছি পৃথিবীর অন্যত্র কোথাও কোথাও পাট উৎপন্ন করা কঠিন নয়, কিন্তু সেখানকার লােকেরা পাট প্রস্তুত করার দুঃসাধ্য দুঃখ বহন করতে নারাজ। বাংলাদেশে যে পাট একচেটে তার একমাত্র কারণ এখানকার জমিতে নয়, এখানকার চাষিতে। অথচ আমি দেখেছি, এই চাষিই তার বালুজমিতে তরমুজ ফলিয়ে লাভ